কাশির সিরাপ

৭০ শিশুর মৃত্যুর জন্য ভারতীয় সিরাপকেই দায়ী করল গাম্বিয়া

গত শুক্রবার জাম্বিয়া সরকারের গঠিত টাস্কফোর্সের পক্ষ এ কথা জানানো হয়।

ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের লোগো। নয়াদিল্লিতে প্রতিষ্ঠানটি দপ্তরের বাইরের বোর্ড থেকে ছবিটি তোলা। ৬ অক্টোবর ২০২২
ছবি: রয়টার্স

কিডনির জটিলতায় গাম্বিয়ায় অন্তত ৭০ শিশুর মৃত্যুর জন্য ভারত থেকে আমদানি করা চারটি কফের সিরাপকে দায়ী করেছে দেশটির সরকারের গঠিত একটি টাস্কফোর্স। গত শুক্রবার টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।

গাম্বিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহমাদো লামিন সামাতেহ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই সিরাপগুলো আমদানির ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে শুরু করে সবকিছুতে ত্রুটি ছিল। এমনকি পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেডিকেল কন্ট্রোল এজেন্সি (এমসিএ) থেকে ওষুধগুলো নিবন্ধিতও ছিল না।

এমসিএর প্রধানকে এ ঘটনায় বরখাস্ত করা হয়েছে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহমাদো লামিন। এসব ওষুধ আমদানির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা ফার্মাসিস্টকেও দোষারোপ করে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই ছাড়াই ওষুধ আমদানিতে অনুমোদন দিয়েছিলেন ওই ফার্মাসিস্ট।

জুলাইয়ের শেষের দিকে গাম্বিয়ায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মারাত্মক কিডনির জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ব্যাপক বাড়তে থাকে। পরে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে গাম্বিয়া সরকার ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে উৎপাদিত কয়েকটি কফের সিরাপ ও ঠান্ডার ওষুধ আমদানির বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেয়। এমনকি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে ওষুধ আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেছে, এসব ওষুধে ‘অগ্রহণযোগ্য’ মাত্রায় ডাইথাইলিন গ্লাইকোল ও ইথিলিন গ্লাইকোল ছিল, যা সাধারণত মোটরযন্ত্রে ব্যবহার করা হয় এবং এটি খাওয়া হলে শরীরে গুরুতর বিষক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, এই বিষক্রিয়ায় কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।

গাম্বিয়ান টাস্কফোর্স বিদেশ থেকে আমদানি করা সব ওষুধ পরীক্ষা করে দেখতে জরুরিভিত্তিতে মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। এই ল্যাবরেটরি স্থাপনে সহায়তা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহমাদো লামিন সামাতেহ বলেন, ফার্মাসি নিয়ে কাজ করার একটি অনুষদ ও ওষুধের বিষয়ে কঠোরবিধি আরোপসহ দেশটির চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়নের সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।

এদিকে গাম্বিয়া সরকার জানিয়েছে, অনিরাপদ ওষুধ পাঠানোর জন্য ভারতের সংশ্লিষ্ট ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকার বলছে, এসব ওষুধ খেয়ে যেসব শিশু মারা গেছে, তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে এ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গাম্বিয়ায় কাশির সিরাপ খেয়ে শিশুমৃত্যুর এমন কেলেঙ্কারির পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং গত অক্টোবরে সিরাপ প্রস্তুতকারক মেডেন ফার্মা বন্ধ করে দেয়।

গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও উজবেকিস্তানে কফের সিরাপ খেয়ে ৩০০ শিশুর মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অসংগতিপূর্ণ এবং ভেজাল ওষুধ নির্মূল করতে ‘তাৎক্ষণিক ও সমন্বিত পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানায়।