নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বোলা আহমেদ তিনুবু জয়ী হয়েছেন। লাগোসের সাবেক এই গভর্নর দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্ট হতে নানাভাবে কাজ করে গেছেন। তবে এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বুহারি দুই মেয়াদ শেষে পদত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে অনেক নাইজেরীয় আশা করেছিলেন, শনিবার অনুষ্ঠিত ভোটে জনগণ দেশের ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য মোকাবিলায় একজন দক্ষ নেতাকে নির্বাচিত করবেন।
চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেছে, অল প্রগ্রেসিভস কংগ্রেস (এপিসি) পার্টির প্রার্থী তিনুবু প্রায় ৮৮ লাখ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) প্রার্থী আতিকু আবুবক্কর পেয়েছেন ৬৯ লাখ ভোট। আর লেবার পার্টির পিটার ওবি পেয়েছেন ৬১ লাখ ভোট।
দ্য ইনডিপেনডেন্ট ন্যাশনাল ইলেকটোরাল কমিশন (আইএনইসি) জানিয়েছে, তিনুবু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নাইজেরিয়ার ৩৬টি রাজ্যের দুই-তৃতীয়াংশে এবং রাজধানী থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২৫ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করেছেন।
ফল ঘোষণার পর এপিসি পার্টির সমর্থকেরা রাজধানী আবুজায় দলের সদর দপ্তরে জড়ো হয়েছেন। তিনুবু হালকা নীল রঙের ঐতিহ্যবাহী আলখাল্লা ও লাল টুপি পরে আসেন। সমর্থকেরা নেচেগেয়ে তাঁকে অভিবাদন জানান।
সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের জবাবে তিনুবু বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যান্ডেট...আপনাদের এই ম্যান্ডেট আমি গ্রহণ করছি। আপনাদের সেবা করতে...আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে এবং নাইজেরিয়াকে মহান করতে চাই।’
তিনুবু আরও বলেন, ‘আমি আমার সহকর্মী প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করি। এটি আমাদেরই জাতি। এটি এমন একটি দেশ, যা আমাদের একসঙ্গে গড়ে তুলতে হবে।’
তবে চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই লেবার ও পিডিপি নির্বাচনে অনিয়ম ও ফলাফলে জালিয়াতির অভিযোগে এই নির্বাচন বাতিলের দাবি তুলেছে। তারা এখন আদালতে যাবে কি না, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়।
৭০ বছর বয়সী রাজনীতিবিদ তিনুবু ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত লাগোসের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নির্বাচনী প্রচারের স্লোগান ছিল, ‘এবার আমার পালা’।
নির্বাচনী প্রচারে তিনুবু ‘নতুন আশার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের স্বাস্থ্য, অতীতের দুর্নীতির অভিযোগ এবং বুহারির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হন। অনেক সমালোচকের ভাষ্য, নাইজেরিয়াকে নিরাপদ করার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বুহারি ব্যর্থ হয়েছেন।
আদনিকে মুতিয়াত আবুবকর নামের এক সমর্থক বলেন, ‘তিনুবু আগেও এই কাজ করেছেন। আমরা জানি, তিনি লাগোসে যা করেছেন, তার চেয়ে এখন আরও ভালো করবেন। তিনি জনগণের মানুষ। তাই সবাই তাঁকে চায়।’
১৯৯৯ সালে নাইজেরিয়ায় সেনাশাসন শেষ হওয়ার পর এই প্রথম এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলো। নাইজেরিয়ার আধুনিক গণতন্ত্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন।
শনিবার বেশির ভাগ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হলেও কিছু ভোটকেন্দ্রে লুটপাট হয়েছে। বেশ কিছু কেন্দ্রে দেরিতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। বিলম্বে ভোট গ্রহণের কারণে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ফল আপলোড করতে ধীরগতি দেখা গেছে। নাইজেরিয়ার বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে ভোট হাতে গণনা করা হয়। এরপর নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে ফল আপলোড করা হয়।
ভোট গ্রহণে বিলম্ব এবং বিভিন্ন রাজ্যের ফল আপলোডে ধীরগতির কারণে বিরোধীরা ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন। গত সোমবার আবুজার একটি ভোট গণনাকেন্দ্র থেকে পিডিপি ও অন্য দলের এজেন্টরা ওয়াক আউট করেন। নাইজেরিয়ার নির্বাচন কমিশন আপস করছে বলে অভিযোগ করেছে পিডিপি।
অবাক করার বিষয় হলো, লাগোসে জয় পেয়েছেন লেবার পার্টির পিটার ওবি। সেখানে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে। এটি তিনুবুর ঐতিহ্যবাহী দুর্গ হিসেবে পরিচিত। সেখানে তিনুবুকে ‘লাগোসের গডফাদার’ নামে ডাকা হয়।
তৃণমূল পর্যায়ে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালিয়ে আনমব্রা রাজ্যের সাবেক গভর্নর ওবি দেশটির প্রতিষ্ঠাকালীন রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দিয়ে ভোটারদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হন।
এখন নাইজেরিয়ার পরবর্তী শাসকের জন্য অপেক্ষা করছে নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিশাল চ্যালেঞ্জ।
দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইসলামপন্থী বিদ্রোহে ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দস্যু মিলিশিয়ারা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ব্যাপক অপহরণ চালায় আর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে।
আফ্রিকার শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশ নাইজেরিয়া। কিন্তু দেশটির কিছু কিছু জায়গায় এখন জ্বালানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে, শোধনাগারের অভাবে প্রচুর জ্বালানি আমদানি বিল বকেয়া পড়েছে এবং কূপ ও পাইপলাইন থেকে অপরিশোধিত তেল চুরি হচ্ছে।