সুদানে চলা গৃহযুদ্ধে আধা সামরিক বাহিনীগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। হোয়াইট হাউসের বরাতে দুই মার্কিন আইনপ্রণেতা গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সুদানে আমিরাতের ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই দুই আইনপ্রণেতা সমালোচনা করে আসছিলেন।
আমিরাতের পক্ষ থেকে এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো, যখন কি না মার্কিন কর্তৃপক্ষ সুদানের জন্য ২০ কোটি ডলার নতুন সহায়তা ঘোষণা করেছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানে গৃহযুদ্ধ চলছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সুদানে বিশ্বের ভয়াবহতম একটি মানবিক বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করা হয়।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের দুই আইনপ্রণেতা বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ তাঁদের সুদানবিষয়ক উদ্বেগকে আমলে নিয়েছে। আর তাই দেশটির কাছে ১২০ কোটি ডলার মূল্যের মার্কিন রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি বন্ধে তাঁরা যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেখান থেকে সরে আসছেন।
ওই দুই আইনপ্রণেতার একজন সিনেটর ক্রিস ভান হোলেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য। গতকাল তিনি হোয়াইট হাউসের কাছ থেকে পাওয়া একটি চিঠি প্রকাশ করেছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, সুদানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কথা নিশ্চিত করেছে আরব আমিরাত।
হোয়াইট হাউসে মধ্যপ্রাচ্য নীতিবিষয়ক সমন্বয়কারী ব্রেট ম্যাকগার্ক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ মার্কিন প্রশাসনকে জানিয়েছে যে তারা এখন আরএসএফের কাছে কোনো অস্ত্র হস্তান্তর করছে না এবং সামনের দিনেও তা করবে না।
দীর্ঘদিন ধরেই আরএসএফকে অস্ত্র দেওয়ার কথা অস্বীকার করে আসছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। যদিও এই আরএসএফ বাহিনীর সঙ্গে মিলে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করেছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত আমিরাতের দূতাবাসের কাছ থেকে এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছিল এএফপি। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি।
হোয়াইট হাউসের ওই চিঠিতে ম্যাকগার্ক সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওই আশ্বাসের ‘বিশ্বাসযোগ্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা’ যাচাইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা হস্তান্তর করার তিন দিন আগে অর্থাৎ আগামী ১৭ জানুয়ারি নাগাদ তিনি এ যাচাই–বাছাইয়ের কাজ শেষ করবেন।
ভান হোলেন হোয়াইট হাউসের হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত যদি প্রতিশ্রুতি না রাখে তবে দেশটির কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে তিনি আবারও চেষ্টা চালাবেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির আরেক আইনপ্রণেতা সারা জ্যাকবসও মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে আমিরাতের বিরুদ্ধে একই ধরনের একটি উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনিও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকাণ্ডকে নজরে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। জ্যাকবস মনে করেন, আমিরাতের সমর্থন না থাকলে এ যুদ্ধে লড়াই করার মতো যথেষ্ট সক্ষমতা আরএসএফের থাকত না।
সুদানের দারফুর অঞ্চলে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা গত বছর বলেছিলেন, চাদ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ‘বিশ্বাসযোগ্য’।
গত বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এবং জেনারেল মোহাম্মদ হামদান হেমেদতি দাগালোর অনুসারী আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে লড়াই চলছে। একসময় মিত্র ছিল দুই বাহিনী। ২০২১ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুদানের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তারা। কিন্তু আরএসএফকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা নিয়ে পরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে।