সুদানে সপ্তাহখানেকের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪১৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ। জাতিসংঘ এ তথ্য জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে সুদানের সামরিক বাহিনী এবং আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে লড়াই শুরু হয়। চলমান এ সংঘাতের এক পক্ষে রয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। অপর পক্ষে আছেন আরএসএফের প্রধান সাবেক মিলিশিয়া নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেদতি।
সংঘাত শুরু হওয়ার পর সুদানের সেনা কমান্ডার আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান তাঁর প্রথম বক্তৃতায় বলেন, বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে দিতে সামরিক বাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরএসএফ বলেছে, তারা শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত। কিন্তু রাজধানী খার্তুম ও আশপাশের শহরগুলোতে গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান আরএসএফের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছেন। বলেছেন, কেবল আরএসএফ আত্মসমর্পণ করলেই তা গৃহীত হবে।
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পক্ষ দুটির মধ্যে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলছিল। এ উত্তেজনা গত শনিবার সংঘাতে রূপ নেয়।
গণবিক্ষোভের জেরে ২০১৯ সালের এপ্রিলে সুদানের প্রেসিডেন্ট আল-বশিরকে উৎখাত করে দেশটির সেনাবাহিনী। এর মধ্য দিয়ে তাঁর প্রায় ৩০ বছরের একনায়ক শাসনের অবসান ঘটে। তখন আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ছিলেন সেনাবাহিনীর মহাপরিদর্শক।
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় ট্রানজিশনাল মিলিটারি কাউন্সিল (টিএমসি)। একপর্যায়ে বুরহানকে টিএমসির প্রধান করা হয়।
মাস কয়েক পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে টিএমসি বদলে গঠন করা হয় সার্বভৌম পর্ষদ (এসসি)। সামরিক-বেসামরিক অংশীদারত্বের ভিত্তিতে গঠিত এ পর্ষদ। পর্ষদের প্রধান হন বুরহান। পর্ষদের উপনেতা আরএসএফের প্রধান হেমেদতি। সার্বভৌম পর্ষদের নেতা হিসেবে বুরহান কার্যত সুদানের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হন। এ পর্ষদ ২০১৯ সাল থেকে সুদান চালাচ্ছে।
২০২১ সালে বুরহান ও হেমেদতি অভ্যুত্থান করে বসেন। তাঁরা সুদানের ক্ষমতা দখল করেন। এতে সুদানের গণতন্ত্রে ফেরার প্রক্রিয়া লাইনচ্যুত হয়।
একপর্যায়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে সামরিক বাহিনী ও আরএসএফ। এ দ্বন্দ্বের জেরে দুই পক্ষের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সুদানে সর্বশেষ যে সহিংসতার সূত্রপাত হলো, তা বুরহান ও হেমেদতি পক্ষের মধ্যকার ক্ষমতার লড়াইয়েরই বহিঃপ্রকাশ।