আফ্রিকান নেতাদের হুমকি

নাইজারের জান্তা সাত দিনের মধ্যে ক্ষমতা না ছাড়লে বল প্রয়োগ

রাজধানীতে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে জান্তাদের সমর্থনে হাজারো মানুষ রাশিয়া ও নাইজারের পতাকা হাতে মিছিল করে। ৩০ জুলাই
ছবি: এএফপি

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী জান্তাপ্রধান আবদোরাহমানে তিয়ানিকে এক সপ্তাহের মধ্যে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন আফ্রিকান নেতারা। অন্যথায় বল প্রয়োগ করার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে জান্তা নেতাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গত বুধবার তিয়ানির বাহিনী দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর দুই দিন পর অভ্যুত্থানের নেতা প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের প্রধান আবদোরাহমানে তিয়ানি নিজেকে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন।

টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে ৬২ বছর বয়সী জেনারেল তিয়ানি বলেন, ধীরে ধীরে অনিবার্য ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়া দেশকে রক্ষা করতে তাঁর বাহিনীর হস্তক্ষেপ দরকার ছিল। বাজোম মানুষকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। তবে কঠিন বাস্তবতা হলো, দেশে মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি, অপমান ও হতাশার পাহাড় জমেছিল।

২০২১ সালের নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন মোহাম্মদ বাজোম। তিনি পশ্চিমাপন্থী হিসেবে পরিচিত। নাইজারের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও একসময় নাইজারে উপনিবেশ স্থাপন করা ফ্রান্স তাঁকে সরাসরি সহায়তা করে। কেননা নাইজারে দেশ দুটির সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।

এই অভ্যুত্থানের পর সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্স ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নাইজারের সঙ্গে নিরাপত্তা ও আর্থিক সহযোহিতা বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা।

এখন আর সতর্ক করার সময় আমাদের হাতে নেই...এখন পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
বোলা তিনুবু, ইকোওয়াসের চেয়ারম্যান ও নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট

নাইজেরিয়ায় দ্য ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইসিওডব্লিউএএস যা ইকোওয়াস নামে পরিচিত) এক জরুরি শীর্ষ সম্মেলন করে বাজোমকে এক সপ্তাহের মধ্যে পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় ব্লকটি সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ‘সব পদক্ষেপ’ নেবে বলে হুমকি দিয়েছে।

গত রোববার ইকোওয়াসভুক্ত দেশগুলোর প্রতিরক্ষা প্রধানেরা বৈঠক করেন। এরপর ব্লকটি এক বিবৃতিতে জানায়, এসব পদক্ষেপের মধ্যে শক্তি প্রয়োগও থাকতে পারে।

ইকোওয়াসের চেয়ারম্যান ও নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা তিনুবু বলেন, ‘এখন আর সতর্ক করার সময় আমাদের হাতে নেই...এখন পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।’

তবে তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি, ১৫ সদস্যের ইকোওয়াস কীভাবে শক্তি প্রয়োগ করবে। গত বছর ব্লকটি জিহাদিদের বিরুদ্ধে এবং সামরিক অভ্যুত্থান ঠেকাতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তোলার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। তবে বাহিনী ও এর পেছনে অর্থায়নের বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা ঠিক করা হয়নি।

নাইজারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে শুক্রবার বক্তব্য দেন আবদোরাহমানে চিয়ানি

ব্লকটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি নাইজারের জান্তা নেতাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। নাইজারের সঙ্গে ব্লকের সদস্যদেশগুলো ‘সব ধরনের বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন’ স্থগিত করেছে।

নাইজারের প্রধানমন্ত্রী ওহাউমুদু মাহামাদু ব্রডকাস্টার ফ্রান্স২৪ সানডেকে বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ‘ধ্বংস করে দিতে যাচ্ছে’।

মোহাম্মদ বাজোমের রাজনৈতিক দল নাইজেরিন পার্টি ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড সোশ্যালিজম (পিএনডিএস) আটকে রাখা প্রেসিডেন্টের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।

ফ্রান্স নিপাত যাক

গত শনিবার ইকোয়াসের অনুষ্ঠিত বৈঠকের নিন্দা জানিয়েছে জান্তা সরকার। তাদের ভাষ্য, এর উদ্দেশ্য ছিল ‘রাজধানী নিয়ামেতে সামরিক হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে নাইজারের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করা’।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জান্তা সদস্য আমোদো আবদ্রামানে বলেন, ‘এই ব্লকের সদস্য নয়, এমন আফ্রিকান দেশগুলো এবং কিছু পশ্চিমা দেশের সহয়তায়’ এই আগ্রাসন চালানো হবে।

ফ্রান্স দূতাবাসের বাইরে রাশিয়ার পতাকা হাতে মিছিল করে জান্তা সমর্থকেরা। এ সময তারা ফ্রান্সবিরোধী স্লোগান দেয়। ৩০ জুলাই

নাইজারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহামাদু ইসোফোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে বলেছেন, বাজোমকে প্রেসিডেন্ট পদে ফেরাতে তিনি জান্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী।

রাজধানীতে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে জান্তাদের সমর্থনে হাজারো মানুষকে রাশিয়া ও নাইজারের পতাকা হাতে মিছিল করতে দেখা গেছে।

মস্কো অনেক বছর ধরে আফ্রিকা ও নাইজারের মালিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। নাইজারের সামরিক জান্তা রাশিয়ার বাহিনীকে সহযোগিতা করছে।

পরে বিক্ষোভ মিছিলটি ফ্রান্স দূতাবাসের দিকে যায়। সেখানে দূতাবাসের সামনে ‘পুতিন দীর্ঘজীবী হোন’ ও ‘ফ্রান্সের পতন হোক’—এমন স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।

বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।

ফ্রান্স এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। তাদের নাগরিক বা স্বার্থে আঘাত হানলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি দূতাবাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নাইজারে বর্তমানে ৫০০ থেকে ৬০০ ফরাসি নাগরিক রয়েছে।