মা সাইদা মু ও ছেলে আশরাফ হাকিমির এই দৃশ্য জয় করে নিয়েছে কোটি হৃদয়। আল থুমামা স্টেডিয়াম, দোহা, কাতার, ২৭ নভেম্বর’২২
মা সাইদা মু ও ছেলে আশরাফ হাকিমির এই দৃশ্য জয় করে নিয়েছে কোটি হৃদয়। আল থুমামা স্টেডিয়াম, দোহা, কাতার, ২৭ নভেম্বর’২২

আশরাফ হাকিমি, জীবনযোদ্ধা মায়ের সংগ্রামী ছেলে

‘উহিব্বুকে উম্মি’। সঙ্গে লাল রঙের ভালোবাসার একটি চিহ্ন। কোলাজ করা দুটি ছবির সঙ্গে আরবিতে দেওয়া এক লাইনের এই টুইট বার্তাকে এ সময়ে ভাইরাল বলাই যায়। টুইটটি করেছেন মরক্কোর ফুটবলার আশরাফ হাকিমি। কেন তাঁর এই টুইট এতটা আলোচনায়? তিনি পিএসজির একজন তারকা ফুটবলার বলে, নাকি আরও গল্প আছে?

নিশ্চয়ই গল্প আছে। কারণ, আশরাফ হাকিমির জীবন যে বড় সংগ্রামের। আর এই সংগ্রামের অন্যতম সারথি তাঁর মা সাইদা মু। যে মা তাঁর সন্তানদের মানুষ করতে করেছেন পাহাড়সমান কষ্ট। পরিবার সামলাতে স্পেনে করেছেন বাসাবাড়ি পরিষ্কারের কাজ। তাঁর বাবা হাসান হাকিমিও কষ্ট করেছেন স্পেনের রাস্তায় রাস্তায়। ফেরি করে বিক্রি করেছেন মালামাল।

আরবি ‘উহিব্বুকে উম্মি’ বাক্যের অর্থ ‘মা আমি তোমায় ভালোবাসি’। পিএসজির রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমির জীবনের গল্পে কোনো রাখঢাক নেই, নেই কোনো লুকোচুরি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় জার্মান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা বুন্দেসলিগার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আশরাফের এক বক্তব্য থেকে।
ক্লাব ফুটবলে খেলা মানে শুধু একটি শহরের জন্য খেলা। আর দেশের হয়ে খেলা মানে পুরো জাতির জন্য খেলা। এই খেলা মানে পূর্বপুরুষদের জন্য খেলা।
আশরাফ হাকিমি, রাইটব্যাক, মরক্কো ও পিএসজি
আশরাফ হাকিমি

আশরাফ হাকিমি আরবিতে ওই টুইটটি করেছেন ২৭ নভেম্বর বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-০ গোলে মরক্কোর জয়ের পর। এর আগেই কাতারের আল থুমামা স্টেডিয়ামের ওই ছবি ও ভিডিও জয় করে নিয়েছে কোটি মানুষের হৃদয়। গ্যালারির একদম সামনের অংশে ছিলেন মা সাইদা। ম্যাচ শেষে আশরাফ সোজা দৌড়ে গিয়েছেন মায়ের কাছে। আর এরপরই সেই স্বর্গীয় দৃশ্য। এতে দেখা যায় মা সাইদা মু ছেলে আশরাফের গালে চুমু খাচ্ছেন। আর ছেলে চুমু খাচ্ছেন মায়ের কপালে। সাইদার গায়ে জড়ানো ছিল মরক্কোর পতাকা। আশরাফ এখানেই থেমে থাকেননি। নিজের জার্সি খুলে মাকে দিয়েছেন। আশরাফ শব্দের অর্থ উত্তম। তিনি এ মাতৃভক্তির মধ্য দিয়ে সে উত্তমেরই পরিচয় দিয়েছেন।  

আরবি ‘উহিব্বুকে উম্মি’ বাক্যের অর্থ ‘মা আমি তোমায় ভালোবাসি’। পিএসজির রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমির জীবনের গল্পে কোনো রাখঢাক নেই, নেই কোনো লুকোচুরি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় জার্মান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা বুন্দেসলিগার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আশরাফের এক বক্তব্য থেকে। আশরাফ বলেন, ‘আমার মা ঘর পরিষ্কার করতেন। বাবা ছিলেন রাস্তায় ভাসমান বিক্রেতা। আমরা একটি সাধারণ পরিবার থেকে এসেছি। যারা জীবিকার জন্য সংগ্রাম করেছিল। আজ আমি প্রতিদিন তাঁদের জন্য লড়াই করি। তাঁরা আমার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা (মা-বাবা) আমার ভাইদের আমার সফলতার জন্য অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করেছিলেন।’

লিওনেল মেসিও নেট–দুনিয়ায় ‘ফ্যামিলি ম্যান’ হিসেবে পরিচিত। হয়তো সে জন্যই তাঁর প্রতি আশরাফের ভিন্ন রকম ভক্তি। তাঁর ভাষায়, ‘আমি জীবনে অনেক বড় বড় খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছি। কিন্তু একমাত্র মিস করি মেসিকে।’  

শিকড়ের প্রতি আশরাফ হাকিমির টানও প্রশংসনীয়। কারণ, তিনি ইচ্ছে করলে স্পেনের জন্য খেলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে খেলছেন মরক্কোর জন্য। এটি তাঁর পিতৃভূমি। জন্মসূত্রে স্পেনের নাগরিক হলেও তিনি মরক্কোরও নাগরিক, জন্ম ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর মাদ্রিদে। আশরাফের ভাষ্য, ক্লাব ফুটবলে খেলা মানে শুধু একটি শহরের জন্য খেলা। আর দেশের হয়ে খেলা মানে পুরো জাতির জন্য খেলা। এই খেলা মানে পূর্বপুরুষদের জন্য খেলা।

৭ বছর বয়সে ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের নজরে আসা আশরাফ বর্তমানে খেলছেন মরক্কো জাতীয় দলের পাশাপাশি ফ্রান্সের বিখ্যাত ক্লাব প্যারিস সেন্ট–জার্মেই তথা পিএসজিতে। নিখুঁত লং পাসের জন্য খ্যাতি রয়েছে এই ডিফেন্ডারের। ফুটবল আশরাফ হাকিমির (২৪) জীবন পাল্টে দিয়েছে। তাঁর স্ত্রী তিউনিসিয়ান বংশোদ্ভূত স্বনামধন্য স্প্যানিশ অভিনেত্রী হিবা আবুক (৩৬)। চলতি বছর অক্টোবরে এই দম্পতিকে নিয়ে প্রচ্ছদ করেছে ‘ভোগ অ্যারাবিয়া’।

পিএসজিতে লিওনেল মেসির সঙ্গে আশরাফ হাকিমির রয়েছে চমৎকার রসায়ন। সেটা বিভিন্ন সময় তাঁর বক্তব্য থেকেও উঠে এসেছে। লিওনেল মেসিও নেট–দুনিয়ায় ‘ফ্যামিলি ম্যান’ হিসেবে পরিচিত। হয়তো সে জন্যই তাঁর প্রতি আশরাফের ভিন্ন রকম ভক্তি। তাঁর ভাষায়, ‘আমি জীবনে অনেক বড় বড় খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছি। কিন্তু একমাত্র মিস করি মেসিকে।’  


মো. ছানাউল্লাহ, প্রথম আলোর সহসম্পাদক