পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে গত বুধবার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের প্রধান আবদোরাহমানে চিয়ানি নিজেকে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
আজ শুক্রবার নাইজারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে এ ঘোষণা দেন চিয়ানি। মাত্র দুই দিন আগেই চিয়ানির বাহিনী দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে এক অভ্যুত্থানে পদচ্যুত করে।
টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে ৬২ বছর বয়সী জেনারেল চিয়ানি বলেন, ধীরে ধীরে অনিবার্য ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়া থেকে দেশকে রক্ষা করতে তাঁর বাহিনীর হস্তক্ষেপ দরকার ছিল। বাজোম মানুষকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। তবে কঠিন বাস্তবতা হলো, দেশে মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি, অপমান ও হতাশার পাহাড় জমেছিল।
তবে বেসামরিক সরকারের হাতে কবে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তা জানাননি চিয়ানি। ২০১৫ সাল থেকে তিনি প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নাইজারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহামাদু ইসোফোর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনি। ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইসোফো।
২৬ জুলাই মোহাম্মদ বাজোমকে রাজধানী নিয়ামের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বন্দী করেন দেশটির প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের সদস্যরা। এরপর দেশটির সংবিধান স্থগিত করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় সীমান্ত। দেশজুড়ে জারি করা হয় কারফিউ। বর্তমানে বাজোম কোথায় আছেন বা তাঁকে এখনো আটকে রাখা হয়েছে কি না, তা পরিষ্কার নয়।
২০২১ সালে নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন মোহাম্মদ বাজোম। তিনি পশ্চিমাপন্থী হিসেবে পরিচিত। নাইজারের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র এবং একসময় নাইজারে উপনিবেশ স্থাপন করা ফ্রান্স তাঁকে সরাসরি সহায়তা করে। কেননা ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ নাইজারে দেশ দুটির সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
রাজধানী নিয়ামে গতকাল বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ বাজোমের রাজনৈতিক দল নাইজেরিন পার্টি ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড সোশ্যালিজমের (পিএনডিএস) প্রধান কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন অভ্যুত্থানের সমর্থনকারীরা। এ ছাড়া কার্যালয় লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া ও এর বাইরে থাকা গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, এর আগে অভ্যুত্থানের সমর্থনকারী কয়েক শ লোক পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন ও অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সেনাদের সমর্থন জানান। এ সময় তাঁদের রাশিয়ার পতাকা ওড়াতে দেখা যায়। অনেকে ফ্রান্সবিরোধী স্লোগান দেন। অনেকের হাতে ‘বিদেশি ঘাঁটি সরিয়ে নাও’ লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল।
ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী রুশ প্রতিষ্ঠান ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন নাইজারের অভ্যুত্থানকে ‘উপনিবেশবাদের’ বিরুদ্ধে দেশটির মানুষের যুদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন। বৃহস্পতিবার ভাগনারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি (ওইউআইএস)। মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে ওইউআইএস ভাগনারের হয়ে কাজ করে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
গত মাসের শেষের দিকে রুশ সামরিক নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ প্রিগোশিন বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। পরে ক্রেমলিনের সঙ্গে সমঝোতার পর বিদ্রোহ থেকে পিছু হটেন তিনি। এরপর থেকেই লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন প্রিগোশিন। ওইউআইএসের প্রকাশিত একটি অডিও বার্তায় তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘নাইজারে যা হয়েছে তা উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে দেশটির মানুষের সংগ্রাম ছাড়া আর কিছু নয়।’ তবে এ বক্তব্যের সত্যতা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি এএফপি।
নাইজারে অভ্যুত্থানের সমালোচনা করে মোহাম্মদ বাজোমের অবিলম্বে মুক্তি চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। এই অভ্যুত্থান আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক বলে আজ মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। একই সঙ্গে বাজোমের মুক্তি চেয়েছেন তিনি।