আদামা দিয়েমির জন্ম ও বেড়ে ওঠা আফ্রিকার দেশ সেনেগালে। একসময় দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে তাঁর গ্রাম ছিল গাছে ঘেরা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘন সবুজ গাছপালা উজাড় হয়ে গেছে। এখন নিজের গ্রাম ও আশপাশের এলাকাকে আবারও সবুজ দেখতে চান আদামা। তাই তিনি ৫০ লাখ গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেছেন। সময় নেবেন পাঁচ বছর। খবর বিবিসির।
সেনেগালের দক্ষিণাঞ্চলের কাসামানসে এলাকার বাসিন্দা হলেও জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ সময় ইউরোপে বসবাস করেছেন আদামা। প্রকৃতির গুরুত্ব ও জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বৈশ্বিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো তিনি ইউরোপে থাকতেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ইউরোপের পাট চুকিয়ে ২০২০ সালে নিজ গ্রামে ফেরেন আদামা। আর তখনই প্রকৃতির পরিবর্তন তিনি উপলব্ধি করতে শুরু করেন।
৪৮ বছর বয়সী আদামা জানান, তাঁর গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় আগে অনেক গাছপালা ছিল। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে তাঁর বেড়ে ওঠা। কিন্তু গ্রামে ফিরে দেখেন, চারপাশ ধূসর হয়ে গেছে। গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। আশপাশের অনেক গ্রামে একটিও গাছ নেই এখন। আদামা বলেন, গ্রামবাসী একের পর এক গাছ কেটে উজাড় করেছে। কিন্তু নতুন করে গাছ লাগানোর কথা ভাবেনি।
এ পরিস্থিতি চিন্তায় ফেলে দেয় আদামাকে। তিনি বুঝতে পারেন, প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। আজ হোক কিংবা কাল, এর অভিঘাত মোকাবিলা করতেই হবে। তাই উদ্যোগী হয়েছেন আদামা। ৫ বছরে ৫০ লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেছেন তিনি। এ জন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করেছেন। এমনকি নিজের পকেট থেকে এ তহবিলে পাঁচ হাজার ডলার দিয়েছেন আদামা।
বর্তমানে আদামা নিজ এলাকায় স্পেনভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থায় প্রকল্প ব্যবস্থাপক পদে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে কৃষি প্রশিক্ষক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। কর্মক্ষেত্র নিজ এলাকাতেই। নিজের পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা গাছ লাগানোর স্বপ্নপূরণে কাজে লাগছে আদামার। ৫০ লাখ গাছ লাগানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
কাসামানসে নদীর মাঝখানে দ্বীপের মতো আদামার গ্রামের অবস্থান। আগে নদীর পানি কদাচিৎ তাঁদের গ্রাম ছুঁয়ে যেত। কিন্তু গাছপালা উজাড় হতে শুরু হওয়ার পর প্রকৃতিও আচরণ বদলেছে। ইদানীং নদী উপচে বিভিন্ন সময় প্লাবিত হয় গ্রাম।
আদামার মতে, এসব গাছ কেটে ফেলা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। তাই গ্রাম, বসতি ও জীবন রক্ষা করতে হলে বেশি বেশি গাছ লাগানো জরুরি। এ ভাবনা তাঁকে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করেছে।