মরক্কোয় ভূমিকম্প

মৃত্যু বেড়ে আড়াই হাজার, গৃহহীন মানুষেরা আশ্রয় খুঁজছেন

ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তারুদান্ত প্রদেশের ইমোলাস গ্রামে ধ্বংসাবশেষের ওপর বসে আছেন এক নারী
 ছবি: এএফপি

মরক্কোয় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ভূমিকম্পের ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো উদ্ধারকাজ শেষ হয়নি। এই অভিযানে যোগ দিয়েছেন স্পেন, যুক্তরাজ্য ও কাতারের উদ্ধারকর্মীরা। সেখানে এ পর্যন্ত আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

গত শুক্রবার মাঝরাতে (স্থানীয় সময় ১১টা ১১ মিনিট) শক্তিশালী ভূমিকম্প মরক্কোতে আঘাত হানে। মরক্কোতে এযাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ছিল এটি। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে মারাকেশসহ মরক্কোর বিস্তীর্ণ জনপদ একরকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আজ সোমবার মরক্কোর রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, ২ হাজার ৪৯৭ জনের নিহত ও ২ হাজার ৪৬৭ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ভূমিকম্পের পর মরক্কোয় এখনো হাজারো মানুষ গৃহহীন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এর ফলে উদ্ধারকাজ এগোচ্ছে না।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ধারকাজের পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে খাবার, তাঁবু, চাদর, সুপেয় পানি বিতরণ করা হচ্ছে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের উদ্যোগে অনেকেই হতাশ হয়েছেন। কারণ, ভূমিকম্পের পর রাজা চতুর্থ মোহাম্মদ কিংবা মরক্কোর প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখানুচ—কেউ জাতির উদ্দেশে কোনো ভাষণ দেননি।

এদিকে সবার কাছ থেকে সাহায্য নিচ্ছে না মরক্কো। তবে স্পেন, কাতার, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে ত্রাণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে কাতার, স্পেন ও যুক্তরাজ্য সেখানে উদ্ধারকর্মী ও বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ মার্কিন ডলারের সাহায্য তহবিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই অর্থ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আবার ত্রাণ সাহায্য করতে চাওয়ার পরও কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি জার্মানি ও ফ্রান্স। ফলে উদ্ধারকাজে দেশ দুটি কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

যে গ্রামে সুস্থ কেউ নেই

এদিকে মরক্কোয় ভূমিকম্পের পর ভয়াবহ এক চিত্র উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। এতে বলা হচ্ছে, শক্তিশালী ভূমিকম্পে কয়েকটি গ্রাম তছনছ হয়ে গেছে। তেমনই একটি গ্রাম তাফেগাঘতে। গ্রামটির পরিস্থিতি দেখতে বিবিসির প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়েছিলেন। শুরুতে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে গ্রামের দিকে যাওয়ার সময় পথে যাঁর সঙ্গেই দেখা হচ্ছিল, তাঁর কাছ থেকেই ভূমিকম্প পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গ্রামটির বাসিন্দারা হয় হাসপাতালে, নয়তো মৃত।

গ্রামে পৌঁছেই সে কথার আলামত মিলল। চারপাশে ধ্বংসাবশেষ দেখে বোঝা যায়, কেন এখানে কেউই অক্ষত থাকতে পারেনি। গ্রামের বাসিন্দাদের ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়িগুলো ইট ও পাথর দিয়ে এমনভাবে তৈরি যে এগুলো শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার উপযোগী নয়।

ভূমিকম্পে গ্রামটির ২০০ বাসিন্দার মধ্যে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেকে নিখোঁজ। হাসান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তাঁর চাচা এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। তাঁকে বের করতে পারার মতো কোনো আশা দেখছেন না।

স্থানীয় এই বাসিন্দা আরও বলেন, তাঁর চাচাকে বের করার মতো যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন, সেগুলো এই গ্রামে নেই। বাইরে থেকেও কোনো বিশেষজ্ঞ সেখানে পৌঁছাননি।

হাসান মনে করেন, জনগণকে সহযোগিতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছাতেই এসব হয়েছে, সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তবে আমাদের এখন সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা দেরি করে ফেলেছে। জনগণকে সহযোগিতা দিতে আসতে তারা দেরি করছে।’

এই ব্যক্তি বলেন, মরক্কো কর্তৃপক্ষের উচিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব সহযোগিতার প্রস্তাব গ্রহণ করা।

আবদু রহমান হাতের ইশারায় একটি ধ্বংসস্তূপ দেখান। তিনি বলেন, ‘ওখানে আমাদের বাড়ি ছিল। আপনি ওখানে সাদা কম্বল আর আসবাবও দেখতে পাবেন। এখন সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে।’

স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়েছেন আবদু রহমান। তিনি বলেন, ‘গতকাল তাদের কবর দিয়েছি। আমরা তাদের সবাইকে একসঙ্গে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় পেয়েছি।’