অভ্যুত্থানের জেরে উত্তাল রয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের রাজনীতি। পদচ্যুত করা হয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে। রাজধানী নিয়ামের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বন্দী রয়েছেন তিনি।
মোহাম্মদ বাজোমকে মুক্ত করার জন্য সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কাও রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ মালি ও বুরকিনা ফাসো জানিয়েছে, নাইজারে যেকোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ তাদের দেশের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
মালি ও বুরকিনা ফাসোতে বর্তমানে সেনা–সমর্থিত সরকার রয়েছে। গতকাল সোমবার (৩১ জুলাই) দুই দেশের রাষ্ট্রীয় টিভিতে একটি যৌথ বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে। এতে বলা হয়, নাইজারের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপের ঘটনা মালি ও বুরকিনা ফাসোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের পদক্ষেপ বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে এবং পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
যৌথ বিবৃতিতে দেশ দুটি আরও জানিয়েছে, তাদের সরকার নাইজারের জনগণ ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ, বেআইনি ও অমানবিক’ নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে গত বুধবার (২৬ জুলাই) অভ্যুত্থান ঘটে। এতে নেতৃত্ব দেন দেশটির প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের সদস্যরা। অভ্যুত্থানের পর গত শুক্রবার নাইজারের প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের প্রধান আবদোরাহমানে চিয়ানি নিজেকে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন।
২০২১ সালে নির্বাচনে জিতে নাইজারের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন মোহাম্মদ বাজোম। তিনি পশ্চিমাপন্থী হিসেবে পরিচিত। নাইজারের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বন্দী রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এবং একসময় নাইজারে উপনিবেশ স্থাপন করা ফ্রান্স এত দিন মোহাম্মদ বাজোমকে সরাসরি সহায়তা করে আসছিল। অভ্যুত্থানের পর বাজোমের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে দেশ দুটি। ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নাইজারের সঙ্গে নিরাপত্তা ও আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছে।
নাইজারের অভ্যুত্থানকারীদের অভিযোগ, পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে মুক্ত করতে ফ্রান্সকে সামরিক হামলা চালানোর অনুমতি দেওয়ার চেষ্টা করছে বিদায়ী সরকার। এ ছাড়া নাইজারের সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার নেতারা। গত রোববার নাইজেরিয়ায় দ্য ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটসের (ইসিওডব্লিউএএস যা ইকোওয়াস নামেও পরিচিত) এক জরুরি শীর্ষ সম্মেলন থেকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এর পরপরই নাইজারে সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিল মালি ও বুরকিনা ফাসো। এ পরিস্থিতিতে মধ্যস্থতার জন্য নাইজার সফর করেছেন আফ্রিকার আরেক দেশ চাদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইদ্রিস ডেবি ইতনো। তিনি বন্দী মোহাম্মদ বাজোম এবং নাইজারের অভ্যুত্থানকারী সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।