লিবিয়ায় গত রোববার ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল আঘাত হানার পর বন্যায় মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলে অন্তত দুই হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে গতকাল ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট (আইএফআরসি) জানিয়েছে।
লিবিয়ায় আইএফআরসির প্রতিনিধিদলের প্রধান তামের রামাদান বলেন, বন্যায় মৃতের সংখ্যা অনেক। এই সংখ্যা কয়েক হাজারে পৌঁছাতে পারে।
এদিকে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যায় শুধু দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর ডেরনায় এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের বিমানমন্ত্রী ও ইমার্জেন্সি রেসপনস কমিটির সদস্য হিচেম কিওয়াট জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। শহরটির ২৫ শতাংশ বিলীন হয়ে গেছে। অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে।
হিচেম কিওয়াট বলেছেন, ডেরনা শহরের চারদিকে লাশ পড়ে আছে। শহরের দুটি বাঁধ ও চারটি সেতু ভেঙে পড়ায় অন্তত এক লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী হয়ে আছেন। এ ছাড়া বেনগাজি, সওসা ও আল-মারজ শহরও প্লাবিত হয়েছে।
এর আগে পূর্বাঞ্চলীয় প্রধানমন্ত্রী ওসামা হামাদ লিবিয়ার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এ অঞ্চলে প্রায় দুই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলোতেও বন্যা হয়েছে। এ অঞ্চলের মিরসাতা শহরে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
২০১১ সালে দীর্ঘদিনের শাসক কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি উৎখাত ও নিহত হওয়ার পর থেকে লিবিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এ কারণে দেশটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। রাজধানী ত্রিপোলি থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অন্তর্বর্তী সরকার ও পূর্বাঞ্চলে আরেকটি সরকার কার্যকরভাবে দেশটিকে বিভক্ত করে রেখেছে।
লিবিয়ায় বিবিসির সাংবাদিক আবদুলকাদের আসাদ বলেছেন, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ তৎপরতার সঙ্গে সাড়া দিতে না পারায় উদ্ধার অভিযান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘লিবিয়ায় কোনো উদ্ধারকারী দল নেই, কোনো প্রশিক্ষিত উদ্ধারকারী নেই। গত ১২ বছরের সবকিছুই ছিল কেবল যুদ্ধ নিয়ে।’
আবদুলকাদের আসাদ আরও বলেন, লিবিয়ায় দুটি সরকার আছে। এ কারণে সহায়তায় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকেই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে কিন্তু সাহায্য আসছে না।
লিবিয়ার জাতীয় ঐক্য সরকারের প্রধান আবদুলহামিদ আল-দাবিবাহ গতকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স-এ বলেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তার জন্য ১৪ টন খাবার, ওষুধ, সরঞ্জাম, ব্যাগ এবং ৮৭ জন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক কর্মীদের নিয়ে একটি জরুরি চিকিৎসা সরবরাহকারী বিমান বেনগাজির দিকে যাচ্ছে।