দক্ষিণ আফ্রিকায় তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে আজ শুক্রবার পার্লামেন্টে এক ভোটাভুটিতে অংশ নিচ্ছেন আইনপ্রণেতারা।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এ ভোটে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন বলে আশা করছেন। দেশটিতে গত মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তাঁর ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) দীর্ঘদিনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এতে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে এবং সরকার গঠনে অন্যান্য দলের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
এএনসির প্রত্যাশা, অন্যান্যদের সমর্থন, বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (ডিএ) সহযোগিতায় তারা একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন এবং সিরিল রামাফোসাকে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে সক্ষম হবে।
৩০ বছরের ক্ষমতা ধরে রাখতে আইনসভার আজকের ভোটে একসময়ের প্রধান শত্রু দলগুলোর আইনপ্রণেতাদের সমর্থনও পেতে হবে ক্ষমতাসীন এএনসিকে।
আগের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এএনসি ঘোষণা করে, জোট সরকার গঠন করা নিয়ে ডিএ ও কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের মহাসচিব ফিকিল এমবালুলা বলেন, সমঝোতার বিস্তারিত বিষয়াদি চূড়ান্ত করতে কাজ চলছে এখনো।
আইনসভায় আসনসংখ্যায় এএনসির পর দ্বিতীয় বড় দল ডিএ। এএনসির ভাগ্য নির্ধারণে ডিএ-এর যথেষ্টসংখ্যক আইনপ্রণেতা রয়েছেন। দলটি বলেছে, ক্ষমতাসীনদের সমর্থন করা প্রশ্নে গতকাল রাতভর ও আজ সকালেও কথাবার্তা চলেছে। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি।
আইনসভায় আসনসংখ্যায় এএনসির পর দ্বিতীয় বড় দল ডিএ। এএনসির ভাগ্য নির্ধারণে ডিএ–এর যথেষ্টসংখ্যক আইনপ্রণেতা রয়েছেন। দলটি বলেছে, ক্ষমতাসীনদের সমর্থন করা প্রশ্নে গতকাল রাতভর ও আজ সকালেও কথাবার্তা চলেছে। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। এ অবস্থায় স্থানীয় সময় আজ সকাল ১০টায় বসছে আইনসভার অধিবেশন।
এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে অন্য কোনো প্রার্থীর নাম না আসায় পার্লামেন্টে আজকের ভোটে রামাফোসাই নির্বাচিত হবেন, এমনটা মনে করা হচ্ছে। এ পদে তিনি যদি একমাত্র প্রার্থী মনোনীত হন, তবে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পথ সুগম হতে পারে তাঁর। সে ক্ষেত্রে তিনি আপনাআপনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। কিন্তু অন্যান্য দলগুলো বিকল্প প্রার্থী মনোনীত করলে অনুষ্ঠিত হবে ভোট।
জোট সরকার গঠনে সমঝোতায় পৌঁছাতে এএনসির সামনে এবারই প্রথম কোনো চূড়ান্ত সময়সীমাও অপেক্ষা করছে। যেমন সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার ১৪ দিনের মধ্যে অবশ্যই আইনসভাকে বসতে হবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাভুটিও করতে হবে এ সময়ের মধ্যে। আগামী রোববার শেষ হচ্ছে এই সময়সীমা। তাই সময়সীমা মানতে আজ ওই বৈঠকে বসছেন আইনপ্রণেতারা।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯৪ সালে সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে এএনসি। তখন থেকে এ পর্যন্ত দলটিকে ক্ষমতায় থাকতে এতটা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়নি। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশটিতে শ্বেত বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটেছিল।
৩০ বছরের ক্ষমতা ধরে রাখতে আইনসভার আজকের ভোটে একসময়ের প্রধান শত্রু দলগুলোর আইনপ্রণেতাদের সমর্থনও পেতে হবে ক্ষমতাসীন এএনসিকে।
এর পর থেকে আইনসভায় বরাবর সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখছিল এএনসি। যার অর্থ, দীর্ঘ এতটা বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করাটা ছিল আনুষ্ঠানিকতামাত্র। অবশ্য এবারের সাধারণ নির্বাচনে ওই দৃশ্যপট বদলে গেছে। নির্বাচনে দলটি ভোট পেয়েছে ৪০ শতাংশের মতো। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ শতাংশ ভোট পেয়েছে ডিএ। স্বাভাবিকভাবে জোট সরকার গঠনের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হয়ে উঠেছে তারা।
ইতিমধ্যে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করতে আইনসভায় আসন পাওয়া অন্য ১৭ দলের সব কটিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এএনসি। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি দল আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছে।
আজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে ভোটাভুটি শুরুর আগে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করবেন আইনসভার সদস্যরা। সব মিলিয়ে ভোটাভুটিতে কয়েক ঘণ্টা লাগতে পারে। আইনসভার নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ৪০০ সদস্য ভোটে অংশ নেবেন। গোপন ব্যালটে এ ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে প্রার্থীকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেতে হবে।
এএনসির সাবেক নেতা ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার দল এমকে পার্টি বলেছে, তাদের ৫৮ সদস্য আইনসভার প্রথম অধিবেশন বর্জন করবেন। যদিও এতে আইনসভার এ অধিবেশন বসার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটবে না।