গৃহযুদ্ধকবলিত সুদানের মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য জেজিরায় বেশ কয়েকজন নারী আত্মহত্যা করেছেন।
মানবাধিকার সংগঠন ও অধিকারকর্মীদের ভাষ্য, এই নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) যোদ্ধারা এই অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরএসএফ জেজিরায় গণহত্যাসহ নৃশংস অপরাধ করেছে। আরএসএফের যোদ্ধাদের দ্বারা যৌন সহিংসতার ঘটনাও বেড়েছে।
স্ট্র্যাটেজিক ইনিশিয়েটিভ ফর উইমেন ইন দ্য হর্ন অব আফ্রিকার (সিহা) প্রধান হালা আল-কারিব বিবিসিকে বলেন, এলাকাটিতে প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে আরএসএফ। তারা লুটপাট চালাচ্ছে। বেসামরিক নাগরিকেরা বাধা দিলে তাঁদের হত্যা করছে। নারী ও ছোট ছোট মেয়েদের ধর্ষণ করেছে।
জাতিসংঘের এমন প্রতিবেদনের পর সুদানে ধর্ষণের শিকার নারীদের আত্মহত্যার খবর সামনে এল।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আধা সামরিক বাহিনী আরএসএফের ক্ষমতার লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ে আরএসএফের যোদ্ধাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত।
একটি মানবাধিকার সংগঠন বলেছে, সুদানের ছয়জন নারীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। যৌন নিপীড়নের শিকার হতে পারেন, এমন আশঙ্কায় তাঁরা আত্মহত্যা করার কথা ভাবছেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি নাকচ করেছে আরএসএফ। তারা বিবিসিকে বলেছে, প্রতিবেদনে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা তথ্য-প্রমাণভিত্তিক নয়।
সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান সিন্ডি ম্যাককেইন সম্প্রতি পোর্ট সুদান সফর করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, যদি যুদ্ধবিরতি না হয়, তাহলে সুদানে বিশ্বের এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে। দেশটিতে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
সম্প্রতি আরএসএফের শীর্ষ কমান্ডারদের একজন আবু আকলা কাইকা দলত্যাগ করেন। তিনি লড়াইয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষে যোগ দিয়েছেন।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আবু আকলা দলত্যাগকালে তাঁর অধীন যোদ্ধাদের একটা বড় অংশ নিজের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।
দলত্যাগের এ ঘটনার পর গত সপ্তাহে জেজিরা লড়াইয়ের একটা বড় ক্ষেত্রে পরিণত হয়। কারণ, রাজ্যটিতে আরএসএফের শীর্ষ কমান্ডার ছিলেন আবু আকলা।
স্ট্র্যাটেজিক ইনিশিয়েটিভ ফর উইমেন ইন দ্য হর্ন অব আফ্রিকার (সিহা) প্রধান হালা আল-কারিব বিবিসিকে বলেন, এলাকাটিতে প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে আরএসএফ। তারা লুটপাট চালাচ্ছে। বেসামরিক নাগরিকেরা বাধা দিলে তাঁদের হত্যা করছে। নারী ও ছোট ছোট মেয়েদের ধর্ষণ করেছে।
সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে সংঘটিত লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নথিভুক্ত করছে সিহা। জেজিরায় গত সপ্তাহে অন্তত তিনজন নারীর আত্মহত্যার তথ্য নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। তাঁদের মধ্যে দুজন আল সেরিহা গ্রামের, অন্যজন রুফা শহরের বাসিন্দা ছিলেন।
আল সেরিহা গ্রামে আত্মহত্যা করেছেন, এমন এক নারীর বোন সিহার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আরএসএফের যোদ্ধারা তাঁর বোনকে বাবা ও ভাইয়ের সামনে ধর্ষণ করেছেন। পরে বাবা ও ভাইকে হত্যা করেন তাঁরা। এরপর তাঁর বোন আত্মহত্যা করেন।
গত সপ্তাহে অনলাইনে আল সেরিহা গ্রামের বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে আরএসএফের হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। ভিডিওতে কম্বলে মোড়ানো অবস্থায় অনেকটি লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বিবিসি ভেরিফাই ভিডিওতে উঠে আসা এলাকার অবস্থান যাচাই করে বাস্তবের সঙ্গে মিল পেয়েছে।
সিহাপ্রধান বলেন, সম্প্রতি ৫০টি বা তার চেয়ে বেশি গ্রামে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে এই মুহূর্তে মাত্র দুটি এলাকায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেসব এলাকায় হামলা হয়েছে, তার অনেকটিতে মুঠোফোন যোগাযোগ বন্ধ। ফলে যোগাযোগ ঠিক হলে এই সংখ্যা বাড়তে পারে।