সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন যে সরকার গঠিত হবে, সেখানে তিনি থাকবেন না। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে কয়েক বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনীর দায়ও অস্বীকার করেছেন তিনি। খবর আল–জাজিরার।
গত ২৫ অক্টোবর সুদানে ক্ষমতা দখল করে নেয় সেনাবাহিনী। তখন থেকে দেশটিতে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। সেন্ট্রাল কমিটি অব সুদানিজ ডক্টরস নামের সংগঠনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০০ বিক্ষোভকারী।
আল–জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আল-বুরহান বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে তাঁরা বদ্ধপরিকর। সুদানি জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রশ্ন এটি। সময়মতো নির্বাচন আয়োজন, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তাঁর সরকার সংকল্পবদ্ধ বলেও দাবি করেন বুরহান। তিনি বলেন, ‘আমরা বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বদ্ধপরিকর। কোনো ধরনের বাধাবিঘ্ন ছাড়াই এ ক্ষমতা হস্তান্তরপ্রক্রিয়া বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেন আল–বুরহান। তিনি বলেন, সুদানি সেনাবাহিনী সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করেনি। সত্য উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
গতকাল রোববার সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়। এমন সময়ে সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হলো, যখন সুদানের বিভিন্ন শহরে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। রোববার খার্তুমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষক। শিক্ষক সংঘের অভিযোগ, রোববারের সমাবেশ থেকে কমপক্ষে ৮০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এদিন কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
বুরহানের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আল–জাজিরার সাংবাদিক রেসুল সেরদার। খার্তুম থেকে তিনি জানান, জেনারেল বুরহান বলেছেন, জনগণের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার অধিকার রয়েছে। সরকার গঠন নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি। বুরহান আশা প্রকাশ করেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে।
এর আগে রোববার সকালে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ সমাবেশে সুদানি নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে বলে অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা।
টানা তিন দশক ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল সুদানের সেনাবাহিনী। এর পর থেকে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে দেশটিতে শাসন করছিল সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক সরকার। গত ২৫ অক্টোবর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির বেসামরিক সরকার উৎখাত করে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদকসহ মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্যকে আটক করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজধানী খার্তুমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। তবে একে অভ্যুত্থান বলতে নারাজ বুরহান। তাঁর দাবি, ক্ষমতা হস্তান্তরপ্রক্রিয়া সংশোধনের পদক্ষেপ এটি।
হামদক এখনো তাঁর খার্তুমের বাসভবনে গৃহবন্দী রয়েছেন। আটক সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের মুক্তি দেওয়ার জন্য সেনা সরকারকে আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বৃহস্পতিবার চার মন্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা আটক আছেন।