দক্ষিণ আফ্রিকার আলোচিত গুপ্ত ভ্রাতৃদ্বয় আমিরাতে গ্রেপ্তার

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার আমলে গুপ্ত পরিবারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে
ছবি: টুইটার

দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতিতে আলোচিত গুপ্ত পরিবারের দুই সদস্য রাজেশ গুপ্ত ও অতুল গুপ্তকে গ্রেপ্তার করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার আমলে এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি গতকাল সোমবার জানানো হয়। খবর রয়টার্সের।

দক্ষিণ আফ্রিকা ও আমিরাত ২০২১ সালের এপ্রিলে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুমোদন দেয়। তবে গ্রেপ্তার দুই ভাইকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফেরানো হবে কি না, তাৎক্ষণিক বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

দক্ষিণ আফ্রিকার আইন ও সংশোধন সেবা মন্ত্রণালয় এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে এ নিয়ে সামনে এগোনোর বিষয়ে আলোচনা চলছে।’ আমিরাতকে এ বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সহযোগিতা দেবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

জুমা ২০০৯-১৮ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর পরিবারের সঙ্গে থাকা সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে গুপ্ত পরিবারের বিরুদ্ধে প্রকল্প বাগিয়ে নেওয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার, মন্ত্রিপরিষদের নিয়োগ প্রভাবিত করা এবং রাষ্ট্রীয় তহবিল তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। তবে জুমা ও গুপ্ত পরিবার কোনো ধরনের অনিয়মে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

২০১৮ সালে জুমা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়েন ভারতীয় বংশোদ্ভূত গুপ্ত ভ্রাতৃদ্বয়। ওই বছরই জুমার আমলের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

আমিরাত ২০২১ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির অনুমোদন দেয়। ফলে বিচারের মুখোমুখি করতে গুপ্ত ভ্রাতৃদ্বয়কে ফেরানোর বিষয়ে আশাবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।

গুপ্ত ভ্রাতৃদ্বয়ের গ্রেপ্তারকে স্বাগত জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বিরোধী দল। এক বিবৃতিতে ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বলেছে, ‘ভেতরে-বাইরে থেকে যারা আমাদের দেশকে বছরের পর বছর লুটেপুটে খেয়েছে, এটা তাদের গ্রেপ্তারের শুরু বলেই আমরা আশা করছি। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার লাখো মানুষ যে দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এ জন্য এসব লোক সরাসরি দায়ী।’

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের চাপের মুখে জ্যাকব জুমা প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ ওঠার পর তাঁর ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছিল।
জুমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর একটি ছিল তিনি ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে নাক গলানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে তাঁর ‘আশকারাতেই’ গুপ্ত পরিবার রাজনীতিতে বেপরোয়া হস্তক্ষেপ করেছে। জুমার পদত্যাগের পর জোহানেসবার্গের গুপ্তবাড়িতে তল্লাশিও চালায় পুলিশ।

১৯৯৩ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরের তিন ভাই—অজয় গুপ্ত, অতুল গুপ্ত ও রাজেশ ওরফে টনি গুপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা শুরু করেন। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের সঙ্গে পরিবারটির ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ্যে আসে ২০১৩ সালে।
অভিযোগ ওঠে, কাকে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে, আড়াল থেকে কলকাঠি নেড়ে তা-ও ঠিক করে দিত গুপ্ত পরিবার। এমনকি কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির’ আদলে বিষয়টিকে ‘গুপ্তগেট’ বলে ডাকতে শুরু করেন।