‘করোনা তো আর নেই’ বলছে অনেক আফ্রিকান  

আফ্রিকায় জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে
 ছবি: এএফপি

আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা ভালো।যদিও অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যস্ত। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা চালু। দক্ষিণ আফ্রিকা বা রুয়ান্ডায় যখন করোনা রোধে কড়া নিয়মকানুন, তখন আইভরি কোস্ট বা কঙ্গোর মানুষ বলছেন, করোনা তো চলে গেছে। বিশেষজ্ঞরা করোনা রোধে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ করোনার সংক্রমণ রোধে নিয়মকানুন শিথিল করেছে। বাসিন্দারাও আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা বজায় রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন।

বসন্তের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকায় লকডাউন অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়। এ কারণে সোয়েটো এলাকার দ্য ব্ল্যাক ও হোয়াইট লাইফস্টাইল পাবগুলো উৎসবমুখর ছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েটো শহরের একটি বারে আয়েশ করে বসেছিলেন পেটুনিয়া মাসেকো। এএফপিকে তিনি বললেন, অনেক কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। যদিও সবকিছু একেবারে আগের মতো হবে না।

কঠোর লকডাউনে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২১ বছরের মাসেকো প্রকৌশলবিদ্যার শিক্ষার্থী। জানালেন, কারও সঙ্গে মেলামেশা না করে ছয় মাস কাটানো খুব কঠিন ছিল। রংচঙে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে তাই বেরিয়েছেন তিনি।

তবে বারগুলো খুললেও করোনার সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ মানা হচ্ছিল। বারে ঢোকার সময় তাপমাত্রা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা ছিল। সেই সঙ্গে মাস্ক পরারও নিয়ম ছিল।

হাতে স্যানিটাইজ মাখতে মাখতে ২৬ বছরের ডিজে টিসেটসো টিনিয়ানে বলেন, কয়েক মাস পর তিনি লাইভ শো করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, শুধু সবার মাস্ক পরা দেখেই বোঝা যায় যে এখনো মহামারি রয়েছে।

উল্টোটা দেখা যায় আইভরি কোস্টে। দেশটির প্রেসিডেন্ট অ্যালাসানে কোয়েটারা বলেন, ‘আমরা করোনাভাইরাস পরোয়া করি না।’ গত মাসে তিনি দলের এক কর্মীকে জনসম্মুখে চুমু খান। করোনার সংক্রমণ রোধে এ ধরনের আচরণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

‘আমরা মাস্ক পরতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু করোনা দূর হয়ে গেছে, কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে আমরা পুরোনো অভ্যাসে ফিরে গেছি।’
আউসমানে আউড্রাগো, মাছ বিক্রেতা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইভরি কোস্টের এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কেউ কোথাও এই নিয়ম মানেন না।

কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসার আবাসিক এলাকা গম্বেতে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও হাত ধোয়ার নিয়ম প্রচলিত। তবে সেখানকার শ্রমজীবী মানুষের বেশির ভাগই মাস্ক থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখেন। একজন অন্যজনের সঙ্গে হাত মেলান। লিঙ্গালাতে কোথাও করোনা নেই, এমন প্রবাদ প্রচলিত।

পশ্চিম আফ্রিকার বুরকিনা ফাসোতে মাছ বিক্রেতা আউসমানে আউড্রাগো বলেন, তিনি সারা জীবন মাস্ক পরতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা মাস্ক পরতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু করোনা দূর হয়ে গেছে, কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে আমরা পুরোনো অভ্যাসে ফিরে গেছি। বুরকিনার রাজধানী আউয়াগাদোগুর গুইলিয়াউম ট্রারোর রেস্তোরাঁয় ঢোকার সময় কেউ হাত ধোয় না। যখন কাউকে হাত ধুতে বলা হয় তখন তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস তো চলে গেছে।’

চাদ ও গ্যাবনে বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক থুতনিতে পরেন। পুলিশের সামনে এলেই কেবল মাস্ক ওপরে তোলেন তাঁরা।

নাইজেরিয়ার সরকারি চাকরিজীবী ইসিয়াকা ওকেসানিয়া বলেন, তিনি প্রায়ই মাস্ক পরতে ভুলে যান। ৪১ বছরের এই ব্যক্তি এএফপিকে বলেন, ‘কতজন করোনায় মারা গেল, সে খবর পড়ি না। এই রোগ থেকে কেবল সৃষ্টিকর্তাই আমাদের উদ্ধার করতে পারেন।’

পশ্চিম আফ্রিকার সেনেগালে জুন মাস থেকে জীবন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তবে উল্টো চিত্র রুয়ান্ডায়। সেখানে লকডাউন কঠোর। মাস্ক ঠিকমতো না পরায় পুলিশ অনেককেই আটক করে।

উত্তর আফ্রিকায় মরক্কোতে লকডাউন রয়েছে। কেনিয়ায় বার ও রেস্তোরাঁগুলো খোলা রয়েছে। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনইয়াত্তা গতকাল সোমবার বলেন, ‘আমরা করোনা সংক্রমণের একটি পর্যায় পার হয়েছি। তবে এখনো আমরা করোনাবিরোধী লড়াইয়ে জিতিনি।’

লাগোসের এস্টেট ক্লিনিকের পরিচালক ইমানুয়েল আকিনইয়েমি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে।

আফ্রিকার রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক জন নাকেনগাসং সতর্কতা জারি করে বলেন, ‘করোনা রোধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’