এক দশকে আফ্রিকায় যত সেনা অভ্যুত্থান

গত এক দশকে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী
ফাইল ছবি: রয়টার্স

আফ্রিকায় সামরিক শাসকদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সর্বশেষ নজির সুদানে। দেশটির সেনাবাহিনী গতকাল সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদকসহ একাধিক মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাজধানী খার্তুমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা।

তিন দশক ধরে ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সুদানের সেনাবাহিনী। এরপর দেশটিতে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে দেশটিতে শাসন করছিল সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক সরকার। গত সেপ্টেম্বরে ওমর আল-বশিরের অনুসারীদের একটি অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির অন্তর্বর্তী বেসামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন সেনারা।

শুধু সুদান নয়, গত এক দশকে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। একঝলকে দেখে নিই এসব অভ্যুত্থানের ঘটনা:

গিনি (২০২০)

প্রেসিডেন্ট আলফা কোন্ডের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান পরিচালনা করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মামাদি দৌমবুয়ার নেতৃত্বাধীন সেনারা। গ্রেপ্তার করা হয় ৮৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট আলফাকে। দীর্ঘদিন কারাগারে কাটানোর পর ২০১০ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি। আলফা ছিলেন দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তবে গত বছর তিনি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশে দেশটির সংবিধান পরিবর্তন করেছিলেন।

মালি (২০২০-২১)
কয়েক মাসের বিক্ষোভের পর ২০২০ সালের আগস্টে ক্ষমতা হারান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বৌবাকার কেইতা। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার জেরে গত মে মাসে দেশটিতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে নেয়। কর্নেল আসিমি গইতা নিজেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে তিনি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সুদান (২০১৯)
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জেরে রাজপথে চলছিল সাধারণ মানুষের রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ। এর মধ্যেই ২০১৯ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর হাতে তিন দশকের রাষ্ট্রক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির। বেসামরিক সরকারের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ করে নেন সেনারা। এই বছরের আগস্টে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন বেসামরিক সরকার, যা দুই বছরের কিছু বেশি সময় স্থায়ী হলো।

জিম্বাবুয়ে (২০১৭)
টানা ৩৭ বছর জিম্বাবুয়েতে শাসন করেছেন রবার্ট মুগাবে। ২০১৭ সালে এই লৌহমানবকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। তাঁর নিজ দল জেডএএনইউ-পিএফের কিছু প্রভাবশালী সদস্য মুগাবের পতন ও দেশত্যাগে ভূমিকা রাখেন। সেনাসমর্থনে ক্ষমতায় বসেন মুগাবে আমলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমারসন মানানগাগওয়া। ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে ৯৫ বছর বয়সে মারা যান মুগাবে।

বুরকিনা ফাসো (২০১৫)
নিজের প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের হাতে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে উৎখাত হন দেশটির প্রেসিডেন্ট মিখায়েল কাফান্দো। তিনি এক বছরের কম সময় আগে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তবে পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সপ্তাহখানেক পর তিনি আবার ক্ষমতা পুনর্দখলে সক্ষম হন। পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন তিনি।

মিসর (২০১৩)
মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে উৎখাত করে সেনাবাহিনী। প্রেসিডেন্ট হন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। নানা আন্দোলন-সংগ্রামের পর এখনো দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন সিসি।

গিনি বিসাউ (২০১২)
দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট রাইমুন্দো পেরেইরা ও প্রধানমন্ত্রী কার্লোস গোমেজ জুনিয়রকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী। ক্ষমতা নেন জেনারেল আন্তোনিও ইন্দজাই। ১৯৭৪ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এটি দেশটিতে চতুর্থ সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা।