ফেডারেল নির্বাচনের পর মঞ্চে স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ারকে আলিঙ্গন করছেন জাস্টিন ট্রুডো। ছবিটি ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর, কানাডার কুইবেকে। এখন এটি শুধুই ছবি। কারণ ইতিমধ্যে দুজনই বিবাহবিচ্ছেদের নথিতে সই করেছেন
ফেডারেল নির্বাচনের পর মঞ্চে স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ারকে আলিঙ্গন করছেন জাস্টিন ট্রুডো। ছবিটি ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর, কানাডার কুইবেকে। এখন এটি শুধুই ছবি। কারণ ইতিমধ্যে দুজনই বিবাহবিচ্ছেদের নথিতে সই করেছেন

ক্ষমতায় থাকাকালে বিচ্ছেদ হয় যেসব বিশ্বনেতার

এখন বিশ্বে আলোচিত অন্যতম খবর হচ্ছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর (৫১) ১৮ বছরের বিবাহিত জীবনের অবসান। ইতিমধ্যে ট্রুডো ও সোফি বিবাহবিচ্ছেদের নথিতে সই করেছেন। শুধু ট্রুডোই নন, ক্ষমতায় থাকাকালে অনেক বিশ্বনেতাই এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। কারও বিবাহিত জীবন হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে, কারও–বা গোপনে ভেঙে গেছে। আবার কেউ হয়তো ক্ষমতায় থেকেই নতুন সম্পর্কের খোঁজ করছেন। এখানে এমন কিছু নেতার কথা তুলে ধরা হলো, রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে যাঁদের সঙ্গীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছিল।

বরিস জনসন

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তাঁর স্ত্রী ক্যারি সিমন্ডস।

লন্ডনের সাবেক মেয়র ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অ্যালেগ্রা মোস্টিন-ওয়েনকে ১৯৮৩ সালে বিয়ে করেন। এর ১০ বছর পর ১৯৯৩ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। এর ঠিক ১২ দিন পর জনসন ম্যারিনা হোয়েলারকে বিয়ে করেন। আর বিয়ের পাঁচ দিন পর এই নবদম্পতির ঘর আলো করে আসে সন্তান।

দ্য স্পেকটেটরের সম্পাদক থাকার সময় কলামিস্ট পেট্রোনেলা ওয়াটের সঙ্গে জনসনের প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। ২০০৯ সালে লন্ডনের মেয়র থাকাকালে জনসন ও আর্ট কনসালট্যান্ট হেলেন ম্যাসিনটায়ারের ঘরে আরেক সন্তান আসে।

২০১৮ সালে জনসন কেবিনেট মন্ত্রী থাকাকালে তিনি ও ম্যারিনা হোয়েলার এক বিবৃতিতে জানান, ‘কয়েক মাস আগে’ তাঁদের বিচ্ছেদ হয়েছে। ২০২০ সালে তাঁদের এই বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়। তত দিনে কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা প্রধানমন্ত্রী।

ইতিমধ্যে বরিস তাঁর বান্ধবী ক্যারি সিমন্ডসের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। ২০২০ সালের এপ্রিলের মধ্যে ক্যারি প্রথম সন্তানের মা হলেও জনসন তৃতীয় সন্তানের বাবা। ২০২১ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। ১৮২২ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় লর্ড লিভারপুলের বিয়ের পর এই প্রথম যুক্তরাজ্যে কোনো প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকার সময় বিয়ে করেন।

নিকোলা সারকোজি

১৯৯৬ সালে নিকোলা সারকোজি সিসেলিয়া সিগানার-আলবেনিজকে বিয়ে করেন

সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজি তাঁর প্রথম স্ত্রী ম্যারি–ডোমিনিক কুলিওলির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়ার অল্প সময় পরেই দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ১৯৯৬ সালে তিনি সিসেলিয়া সিগানার-আলবেনিজকে বিয়ে করেন। এরপর বলা হয়, ২০০৫ সালে সিগানার-আলবেনিজ অন্য একজনের জন্য সারকোজিকে ছেড়ে যান। এমন গুঞ্জনও ছিল, সারকোজির অ্যানি ফুলদা নামের এক সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।  

দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের চার মাস পর সারকোজি সংগীতশিল্পী কার্লা ব্রুনিকে বিয়ে করেন সারকোজি

সিগানার-আলবেনিজ ও সারকোজির মধ্যে ২০০৭ সালে বিচ্ছেদ হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরুর পাঁচ মাস পরই সারকোজির জীবনে এ ঘটনা ঘটে। এই বিচ্ছেদের চার মাস পর সারকোজি সংগীতশিল্পী কার্লা ব্রুনিকে বিয়ে করেন।

ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ

২০০৭ সালে ওলাঁদ ভ্যালেরি ট্রিয়ারওয়েইলার নামের এই সাংবাদিকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান

আরেক সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট  ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ (২০১২–২০১৭) বিয়ে না করেই ২৯ বছর ধরে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক সেগোলেন রয়্যালের সঙ্গে সংসার করে গেছেন। তাঁদের ঘরে চার সন্তানও রয়েছে। এর আগে ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সারকোজির কাছে হেরে যান রয়্যাল। ওই সময় তাঁরা ঘোষণা দেন, তাঁরা আলাদা হয়ে যাচ্ছেন।

বিয়ে না করেই ২৯ বছর সংসার করেছেন সেগোলেন রয়্যালের ও ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ

ওলাঁদ তখন ভ্যালেরি ট্রিয়ারওয়েইলার নামের এক সাংবাদিকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। গণমাধ্যমে তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি উঠে আসার পর তিনি রাজনৈতিক প্রতিবেদন করা বন্ধ করে দেন। ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ ঘোষণা দেন, ট্রিয়ারওয়েইলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভেঙে গেছে। একটি ট্যাবলয়েড ম্যাগাজিনে অভিনেত্রী জুলি গায়েতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের খবর ছাপা হওয়ার পরই তিনি এ ঘোষণা দেন। গত বছর তিনি গায়েতকে বিয়ে করেন।

গত বছর অভিনেত্রী জুলি গায়েতকে বিয়ে করেন ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ

ভ্লাদিমির পুতিন

ভাষাবিদ ল্যুদমিলার সঙ্গে পুতিনের বিবাহিত জীবন ১৯৮৩ সাল থেকে ৩২ বছরের

রাশিয়ার সাবেক কেজিবি অপারেটিভ ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একবারই বিয়ে করেছেন। ভাষাবিদ ল্যুদমিলার সঙ্গে তাঁর বিবাহিত জীবন ১৯৮৩ সাল থেকে ৩২ বছরের। ২০০৮ সালে মস্কোভস্কি করেসপনডেন্ট পত্রিকার একজন সাংবাদিক লিখেন, পুতিন শিগগিরই বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে যাচ্ছেন এবং বান্ধবী এলিনা কাবায়েভারকে বিয়ে করবেন। পুতিনের বয়স তখন ৫৬ বছর। আর অবসর নেওয়া জিমন্যাস্টিক অলিম্পিকে সোনা বিজয়ী এলিনার বয়স তখন ২৫ বছর। পুতিন এটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন। এরপর ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের এজেন্টরা পত্রিকা দপ্তরটিতে অভিযান চালায় এবং পরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।

গুঞ্জন রয়েছে, পুতিন ও বান্ধবী এলিনার দুই ছেলে রয়েছে

এই বিয়ে কেবল নামে মাত্র টিকে আছে বলা হলেও প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ল্যুদমিলা ফার্স্ট লেডির খেতাব বয়ে বেড়িয়েছেন ২০১৩ সাল পর্যন্ত। এর পরের বছর তাঁদের বিচ্ছেদ হয়।

এরপর জল্পনাকল্পনা ও ইশারা ইঙ্গিত শুধু বেড়েই চলেছে। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে নিউজউইক এক প্রতিবেদনে এলিনাকে ‘পরবর্তী মিসেস পুতিন’ বলে উল্লেখ করে। গুঞ্জন রয়েছে, এলিনা ও পুতিনের দুই ছেলে রয়েছে। তাদের জন্ম হয়েছে সুইজারল্যান্ডে।

সানা মারিন

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের বাইরে সানা মারিন ও মার্কাস রাইকোনের বিয়ের আনুষ্ঠানিক ছবি

ফিনল্যান্ডের ৪৬তম প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব নেওয়ার আগের দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে তিনি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তবে তখনো তিনি অবিবাহিত। এই সন্তানের বাবা মার্কাস রাইকোন ছিলেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু। ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে তাঁদের বিয়ে হয়।

গত এপ্রিলে মারিন নির্বাচনে হেরে যান। এর পরের মাসেই তিনি তাঁর বৈবাহিক জীবনের অবসানের ঘোষণা দেন। এমনকি তিনি ঘোষণা দেন, এই শরতে পার্টি কংগ্রেসে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতার পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন।

সিলভিও বেরলুসকোনি

গত জুনে বেরলুসকোনি মারা যাওয়ার আগপর্যন্ত ফাসিনার সঙ্গেই ছিলেন

ইতালির ধনকুবের ব্যবসায়ী, মিডিয়া মোগল সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর ঘোষিত চারজন বান্ধবী ছিলেন। তিনি প্রথম বিয়ে করেন কার্লা ডাল ওগলিওকে। তবে ১৯৯৪ সালে বেরলুসকোনির রাজনৈতিক জীবন শুরুর আগেই এই সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।

১৯৯০ সালে বেরলুসকোনি অভিনেত্রী ভেরোনিকা লারিওকে বিয়ে করেন। দুই দফায় (মে ১৯৯৪ থেকে জানুয়ারি ১৯৯৫ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬) প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁদের এ সম্পর্ক বজায় ছিল।

১৯৯০ সালে বেরলুসকোনি অভিনেত্রী ভেরোনিকা লারিওকে বিয়ে করেন

২০০৮ সালে বেরলুসকোনির তৃতীয় মেয়াদ শুরু হয়। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, ওই সময় লারিও বেরলুসকোনিকে ভর্ৎসনা করে একটি খোলা চিঠি দিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে আবেদন করেন।

বেরলুসকোনি পরের ১০ বছরের বেশির ভাগ সময় অল্প বয়সী সুন্দরী বান্ধবী ফ্রান্সেসকা পাসকেলের সঙ্গে কাটিয়েছেন

বেরলুসকোনি পরের ১০ বছরের বেশির ভাগ সময় অল্প বয়সী সুন্দরী বান্ধবী ফ্রান্সেসকা পাসকেলের সঙ্গে কাটিয়েছেন। কর ফাঁকির মামলায় বেরলুসকোনি যে বছর অভিযুক্ত হন, সে বছরই দুজনের সখ্য গড়ে ওঠে। তবে ২০২০ সালে তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে বেরলুসকোনি মধ্যডানপন্থী রাজনীতিবিদ মার্তা ফাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন। গত জুনে বেরলুসকোনি মারা যাওয়ার আগপর্যন্ত ফাসিনার সঙ্গেই ছিলেন।