আদানি বনাম আম্বানি: ভারতীয় দুই ধনকুবেরের দ্বৈরথ

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতের ব্যবসায়িক অঙ্গনে সবচেয়ে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন গৌতম আদানি ও মুকেশ আম্বানি। তাঁরা দুজনই শতকোটিপতি, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সম্পদশালীদের তালিকায়ও তাঁদের নাম আসছে। এই দুই ধনকুবেরের বাড়ি ভারতের গুজরাট রাজ্যে, যেখানে একসময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই ব্যবসায়ীর পাল্লাপাল্লি দিয়ে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ এবং তাঁদের ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠা নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট

মুন্দ্রা—ভারতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি বন্দর। রোদঝলমলে দিনগুলোতে বন্দরের জেটি থেকে চোখ মেললে দেখা যাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল শোধনাগারটি। এর অবস্থান কচ্ছ উপসাগর থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে।

গুজরাটের যে এলাকায় ওই বন্দর ও তেল শোধনাগারের অবস্থান, গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে সেখানে ছিল ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশার প্রজননক্ষেত্র জলাভূমি আর কৃষিজমি। আজকের দিনে স্থাপনা দুটি ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে সেগুলোর নির্মাতা ধনকুবেরদের সাফল্যগাথা তুলে ধরছে।

গৌতম আদানি (৬০) ও মুকেশ আম্বানি (৬৫) —দুজনই শতকোটিপতি, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতের ব্যবসাজগতে সবচেয়ে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন তাঁরা। ভক্ত–অনুরাগীদের কাছে তাঁরা দেশপ্রেমী, ভূমিকা রাখছেন জাতি গঠনে। ভারতের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সম্পদ ব্যবহার করছেন। তবে সমালোচকদের কাছে, নিজেদের আখের গোছাতেই তাঁদের সব চেষ্টা। বস্তুত তাঁদের অবস্থান এই দুইয়ের মাঝামাঝি কোনো জায়গায়।

ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যে আদানি ও আম্বানির প্রভাব যে বাড়ছে, তা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। অনেক পর্যবেক্ষকের মুখে এখন ‘এএ (আদানি–আম্বানি) অর্থনীতি’র কথা। এটা কিছুটা বাড়াবাড়ি, তবে এটাও সত্যি যে আদানি ও আম্বানির অধীনে থাকা কোম্পানিগুলোর মোট আয় ভারতের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ৪ শতাংশের সমান। এ ছাড়া ভারতের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধনি ব্যয়ের ২৫ শতাংশের পেছনেও রয়েছেন দুই ধনকুবের। এটা আবার এমন একটা সময়ে ঘটছে যখন ভারতের সামগ্রিক বিনিয়োগ কমছে।

আদানি ও আম্বানি—দুজনই জ্বালানি খাতে নতুন করে সাত হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যাটারি, হাইড্রোজেন ও সৌরবিদ্যুতের মতো প্রকল্পে এই বিনিয়োগ করবেন তাঁরা।

গত ২৬ জুলাই আদানি গ্রুপের বার্ষিক সভায় গৌতম আদানি বলেন, ‘ভারতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা কখনো সরে যাইনি। এমনকি এখানে আমাদের বিনিয়োগের গতি কখনো কমিয়েও দিইনি।’ একইভাবে ২৯ আগস্ট বার্ষিক সভায় মুকেশ আম্বানি তাঁর রিলায়েন্স গ্রুপের আকার দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা দেয় দেশপ্রেম। এ থেকেই আমরা শক্তি পেয়ে থাকি।’

ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই দুজনের এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণ হলো, তাঁরা এমন কিছু ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছেন, যেখানে ভারতের অন্যরা প্রায়ই ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁদের এই সফলতা এসেছে এমন সব ব্যবসার মধ্য দিয়ে, যেগুলো আকারে বিশাল, আবার বেড়েও উঠেছে দ্রুত।

রিলায়েন্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই আম্বানি। ছেলে মুকেশ আম্বানির নেতৃত্বে রিলায়েন্স গ্রুপ পেট্রোকেমিক্যাল ও জ্বালানি তেল পরিশোধন থেকে শুরু করে টেলিযোগাযোগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও খুচরা বিক্রি পর্যন্ত ব্যবসা বাড়িয়েছে। 

সেই তুলনায় আদানির ব্যবসায় কিছুটা ফাটকাবাজি ছিল, নগদ অর্থের প্রবাহও খুব বেশি ছিল না। মাত্র এক দশক আগেও মুম্বাইয়ে একটি ছোট অফিস ছিল আদানির। সেখান থেকে আজ তিনি বিভিন্ন বন্দর, বিমানবন্দর ও জ্বালানি পরিষেবায় বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।

তাঁর এসব ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে সাতটি সরকারি কোম্পানি এবং বেশ কয়েকটি বেসরকারি উদ্যোগের ছাতার তলে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আদানি ও আম্বানির পাবলিক কোম্পানিগুলোর মোট অর্থমূল্য ৪৫ হাজার ২০০ কোটি (৪৫২ বিলিয়ন) ডলার। মাত্র চার বছর আগেও এই অঙ্কটা ছিল ১১ হাজার ২০০ কোটি (১১২ বিলিয়ন) ডলার।

আদানি–আম্বানি যেসব বিনিয়োগ করেছেন, সেখানে মুনাফার চিন্তা খুব বেশি ছিল বলে মনে হয় না। বিগত এক দশকে বিনিয়োগ থেকে ১০ শতাংশের বেশি আয় করেনি রিলায়েন্স। আর আদানির তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র দুটি আয়ের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে। সেগুলো আবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) গড়ে তোলা।

আমলাতন্ত্রকে সামাল

ভারতের শীর্ষ এই দুই ব্যবসায়ীই এ সময়ের মধ্যে বিপুল ব্যক্তিগত সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। গত চার বছরে তাঁদের ভাগ্য ফুলেফেঁপে চার গুণ হয়েছে। ভারতের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হুরুন ইন্ডিয়ার তথ্যমতে, চার বছরে দুজনের সম্মিলিত ব্যক্তিগত সম্পত্তি বেড়ে ৬ হাজার ৫০০ কোটি (৬৫ বিলিয়ন) ডলার থেকে ২৩ হাজার ৭০০ কোটি (২৩৭ বিলিয়ন) ডলার হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে শীর্ষ ধনকুবেরদের তালিকায় ইলন মাস্ক ও জেফ বেজোসের পরই তৃতীয় স্থানে রয়েছেন গৌতম আদানি।

আদানি ও আম্বানির যে বিপুল উচ্চাভিলাষ, তা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে। ভারত সরকার এখনো রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কয়েক শ কোম্পানির দেখভাল করছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধি আনার ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই সরকারের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা গেছে।

সরকার ভারী শিল্প ও অবকাঠামো খাতের বিকাশের বিষয়টি কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিতে চাইছে। এসব কোম্পানি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রকল্পে বরাদ্দসংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা সামলে নিতে সক্ষম বলে দেখা গেছে। আদানি ও আম্বানি দুজনই ভারতের শক্তিশালী আমলাতন্ত্রকে সামাল দিতে পেরেছেন।

আদানি–আম্বানি যেসব বিনিয়োগ করেছেন, সেখানে মুনাফার চিন্তা খুব বেশি ছিল বলে মনে হয় না। বিগত এক দশকে বিনিয়োগ থেকে ১০ শতাংশের বেশি আয় করেনি রিলায়েন্স। আর আদানির তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র দুটি আয়ের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে। সেগুলো আবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) গড়ে তোলা।

এই কোম্পানিগুলোর একটি—খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান আদানি উইলমার। সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় থাকা আদানি উইলমারের আয় ১৫ শতাংশ। অপরটি হলো ফ্রান্সের জ্বালানি প্রতিষ্ঠান টোটাল–এর সঙ্গে যৌথভাবে গড়ে তোলা প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের ব্যবসা। বিনিয়োগের বিপরীতে এর আয় ১৯ শতাংশ।

বিভিন্ন খাতে একের পর এক বিনিয়োগ আদানি ও আম্বানির শিল্প গ্রুপ দুটিকে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করছে। এতে খুব অবাক হওয়ার কিছু নেই। অনেক দিক দিয়েই রিলায়েন্স ও আদানি গ্রুপের মিল রয়েছে। দুটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতার জন্মস্থান গুজরাট।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই রাজ্যের। তিনি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন রাজ্যটিতে অর্থনীতির তাক লাগানো উন্নতি হয়। মোদি যে আজ এতটা ওপরে উঠেছেন, তার পেছনে এটিও একটি কারণ।

আদানি ও আম্বানির গ্রুপ দুটির বেড়ে ওঠা ভারতে বিদ্যমান শিল্পগুলোয় নেতৃত্বস্থানে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। পরে সংশ্লিষ্ট নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগ করেছে তারা। এভাবেই তারা ধীরে ধীরে ভারতের অর্থনীতি ও মোদির অর্থনৈতিক অগ্রগতির লক্ষ্যের সঙ্গে পুরোদস্তুর জড়িয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

যেভাবে ব্যবসা বাড়িয়েছে রিলায়েন্স

রিলায়েন্সের ক্ষেত্রে, গ্রুপটি প্রথমে বস্ত্র খাতে ব্যবসা শুরু করে। পরে তারা নিজেরাই বস্ত্র উৎপাদনে নামে। তারপর হাত দেয় এই খাতে ব্যবহৃত পলিমার তৈরিতে। শেষে শুরু করে ওই পলিমার তৈরিতে ব্যবহার করা পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন। ২০১৭ সালে রিলায়েন্স গ্রুপের আয়ের ৯১ শতাংশ এবং মুনাফার ৯৯ শতাংশ এসেছিল পরিশোধন, জ্বালানি ও পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসা থেকে।

তখন থেকে রিলায়েন্স গ্রুপ একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। গ্রুপটির টেলিকম প্রতিষ্ঠান জিও ২০১৬ সালে সেবা দেওয়া শুরু করে। বর্তমানে জিওর টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৪২ কোটি ১০ লাখ গ্রাহক। এই নেটওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করেই আবার নতুন নানা ব্যবসা শুরু করেছে রিলায়েন্স।

রিলায়েন্সের খুচরা পণ্য বিক্রির জন্য নিত্যপণ্যের ২ হাজার ৫০০টি এবং ইলেকট্রনিকস পণ্যের ৮ হাজার ৭০০টি দোকান রয়েছে। তাদের ফ্যাশন পণ্যের দোকান আছে ৪ হাজার, অনলাইনেও চলে বেচাবিক্রি। গত বছরে তারা ৪ কোটি ৩০ লাখ পোশাক বিক্রি করেছে।

ভারতের আইনকানুনের প্যাঁচে পড়ে শেষ পর্যন্ত দেশটিতে রিলায়েন্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করেছে পোশাক, খাদ্যপণ্য ও খেলনার খুচরা বিক্রেতা কয়েক ডজন খ্যাতনামা বিদেশি প্রতিষ্ঠান।

আর আমাজন ও ওয়ালমার্টের মতো যেসব প্রতিষ্ঠান ভারতে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে চেয়েছিল, সেগুলোকেও আইনি কারণে বড় বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া রিলায়েন্সের অধীনে তিনটি সংবাদ–সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্ক, সিনেমা প্রোডাকশন হাউস ও অর্থনীতিবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল রয়েছে।

হীরা ব্যবসা থেকে বন্দরের সাম্রাজ্য

গত শতকের আশির দশকে হীরা ব্যবসা শুরু করেন গৌতম আদানি। এরপর সরকারের কাছ থেকে মুন্দ্রা বন্দরের উন্নয়নকাজের অনুমতি পাওয়ার আগপর্যন্ত তিনি বিভিন্ন ধাতু ও খাদ্যশস্যের ব্যবসাও করেছেন। মুন্দ্রা বন্দরের কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে।

বর্তমানের বন্দরটিতে রেল সংযোগ এবং পণ্যবাহী বিমান চলাচলের জন্য বিমানবন্দর রয়েছে। পাশাপাশি নৌপথে পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, উড়োজাহাজের জ্বালানি, শুকনা পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনের সুবিধাও রয়েছে।

পণ্য পরিবহনকারী যানবাহন চলাচলের দিক দিয়ে মুন্দ্রা বন্দরের অবস্থান বিশ্বে ২৬তম। মুন্দ্রাকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম বন্দরগুলোর তালিকার শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আদানির। তাঁর নিয়ন্ত্রণে ভারতের আরও ডজনখানেক ছোট বন্দর রয়েছে। ভারতে যত পণ্য আমদানি–রপ্তানি হয়, তার ২৪ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে আদানির মালিকানায় থাকা বন্দরগুলো।

এ ছাড়া এই বন্দরগুলোর মাধ্যমে ভারতে ৪৩ শতাংশ কনটেইনার আনা–নেওয়া করা হয়। দেশটির বন্দর থেকে আয়ের ৫০ শতাংশ হয় তাঁর এসব বন্দর থেকে। ভারতকে রপ্তানিমুখী শক্তিতে পরিণত করতে সরকারের যে লক্ষ্য, তার সঙ্গে মিলে যায় আদানির বন্দর ব্যবসায়ের এই সম্প্রসারণ।

আদানিনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের এক–তৃতীয়াংশের বেশি কয়লা আমদানি করে। দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ২২ শতাংশ হয় তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এই বিদ্যুতের বেশির ভাগই উৎপাদন করা হয় কয়লা থেকে। আদানির গুদামজাতকরণ (ওয়্যারহাউস) ব্যবসাও দিন দিন বড় হচ্ছে।

ভারতের ৩০ শতাংশ খাদ্যশস্য এসব গুদামে মজুত করা হয়। ২০১৯ সালে সাতটি বিমানবন্দরের মালিকানা কিনে নেয় আদানি গ্রুপ। এই বিমানবন্দগুলো দিয়ে ভারতের বিমানযাত্রীদের এক–চতুর্থাংশ যাতায়াত করেন। এ ছাড়া দেশটিতে আকাশপথে পরিবহন করা পণ্যের এক–তৃতীয়াংশই আনা–নেওয়া করা হয় আদানির মালিকানায় থাকা বিমানবন্দরগুলো দিয়ে। 

ভারতের মুম্বাই শহরের নাবি মুম্বাই এলাকায় বিশাল একটি খালি জমি রয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সেখানে শহরটির দ্বিতীয় বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে আদানি গ্রুপের।

শহরের অন্য বিমানবন্দরটির মালিকানাও তাদের। গ্রুপটির অন্য বিনিয়োগের মধ্যে ভারতের ৯টি রাজ্যে ১৩টি বড় সড়ক নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। ইসরায়েলের হাফিয়া বন্দরের মালিকানায়ও রয়েছে তারা। এ ছাড়া গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন খনি থেকে রেলের মাধ্যমে কয়লা তাদের বন্দরে নেওয়ার প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ওই খনি থেকে ধীরে ধীরে ভারতে কয়লা রপ্তানি শুরু হয়েছে। 

বিরোধ হতে পারে যেখানে

যে গতিতে এই দুই গ্রুপ তাদের ব্যবসায়ী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে তাদের মধ্যে বিরোধী তৈরি হওয়া অনেকটা অনিবার্য ছিল। আগস্টে বিতর্কিত উপায়ে ভারতের সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির মালিকানা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন গৌতম আদানি। এর আগে কুইনটিলিওন বিজনেস মিডিয়া নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের ৪৯ শতাংশ শেয়ার কিনেছিলেন তিনি। আদানির এই প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী দিনে রিলায়েন্সের গণমাধ্যম ব্যবসার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে।

আদানি ও আম্বানি—দুজনই জ্বালানি খাতে নতুন করে সাত হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যাটারি, হাইড্রোজেন ও সৌরবিদ্যুতের মতো প্রকল্পে এই বিনিয়োগ করবেন তাঁরা।

দিন দিন ফুলেফেঁপে ওঠা ব্যবসা একই সুতোয় গাঁথতে আদানি গত মাসে অবাক করে দেওয়ার মতো একটি কাজ করেন। সরকারি নিলামের মাধ্যমে ফাইভ–জি ব্যান্ডউইডথ কেনেন তিনি। তাঁর এই উদ্যোগ টেলিযোগাযোগ খাতে রিলায়েন্সের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দেয়। এ ছাড়া মুন্দ্রায় আদানির তেল শোধনাগারের কারণে আম্বানির কিছু ব্যবসা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্রেডিটসাইটস দুই ব্যবসায়ীর প্রতিযোগিতা নিয়ে একটি হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তারা বলছে, এ ধরনের প্রতিযোগিতা দুই পক্ষকেই ভুল কিছু অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে দুজনের মধ্যে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্ষণস্থায়ীও হতে পারে।

 ইংরেজি থেকে অনুবাদ: শেখ নিয়ামত উল্লাহ