তীব্র অ্যাজমা বা হাঁপানির চিকিৎসায় মুখে খাবারযোগ্য ওষুধ স্টেরয়েডের চেয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফ্যাসেনরা ইনজেকশন আরও বেশি কার্যকর। এ ছাড়া এটি প্রয়োগে এ রোগের আরও চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসে। ৫০ বছর ধরে হাঁপানির মানসম্মত চিকিৎসা হিসেবে স্টেরয়েডের ব্যবহার হয়ে আসছে।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অ্যান্টিবডি ড্রাগ ‘ফ্যাসেনরা’ রাসায়নিকভাবে ‘বেনরালিজুমাব’ নামে পরিচিত। ইওসিনোফিলিক অ্যাজমা নামে একটি গুরুতর শ্বাসকষ্টের রোগের চিকিত্সায় ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো প্রথম এর অনুমোদন দিয়েছিল। ফুসফুসের প্রদাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্বেত রক্তকণিকাকে লক্ষ্য করে এ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
নতুন গবেষণায় নেতৃত্ব দেন কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা। অ্যাজমা বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)-এর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ১৫৮ জন রোগীর ওপর গবেষণা চালান তাঁরা।
গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাজমার আক্রমণকালে (ইগজারবেশন) অ্যাস্ট্রাজেনেকার ইনজেকশন ফ্যাসেনরা মুখে খাবার উপযোগী ‘কর্টিকোস্টেরয়েড প্রিডনিসোলোন’ চেয়ে বেশি কার্যকর। ইগজারবেশন বা রোগের তীব্রতার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বুক আঁটসাঁট হয়ে আসার মতো উপসর্গ থাকতে পারে।
অ্যাজমা ও সিওপিডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় এটি একটি যুগান্তকারী ফলাফল হতে পারে।মোনা বাফাডহেল, কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক
গবেষকেরা বলছেন, প্রিডনিসোলোনের মতো স্টেরয়েড ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে পারে, তবে এতে তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বেড়ে যাওয়ার ৩০ শতাংশ ও সব ধরনের অ্যাজমার প্রায় ৫০ শতাংশের ক্ষেত্রে ইগজারবেশন দেখা দেয়। আবার রোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এমন তীব্রতাও ঘন ঘন দেখা দিতে পারে।
গবেষকেরা বলছেন, তীব্র অ্যাজমায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় স্টেরয়েড বারবার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়, বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। অন্যথায় ৯০ দিনের মধ্যে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
গবেষণা ফলাফল বলছে, জীবনাশঙ্কা রয়েছে, এমন জরুরি পরিস্থিতিতেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ওষুধ শুধু হাসপাতালেই নয়; বাড়িতে বসেও দেওয়া যায়। এটি প্রয়োগে বারবার চিকিৎসা করা বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও কমে আসে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, তীব্র অ্যাজমায় বেনরালিজুমাব প্রয়োগের ২৮ দিন পর শ্বাসকষ্টের উপসর্গ অধিকতর ভালোভাবে কমে এসেছে। প্রিডনিসোলোন দিয়ে চিকিৎসা শুরুর ৯০ দিন পরও সুস্থ না হওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় চার ভাগ কম সুস্থ না হওয়া ব্যক্তি পাওয়া গেছে ফ্যাসেনরা গ্রহণকারীদের মধ্যে।
গবেষণা ফলাফল বলছে, জীবনাশঙ্কা রয়েছে, এমন জরুরি পরিস্থিতিতেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ওষুধ শুধু হাসপাতালেই নয়; বাড়িতে বসেও দেওয়া যায়। এটি প্রয়োগে বারবার চিকিৎসা করা বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও কমে আসে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক মোনা বাফাডহেল এক বিবৃতিতে বলেন, অ্যাজমা ও সিওপিডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় এটি একটি যুগান্তকারী ফলাফল হতে পারে।
প্রতিবছর অ্যাজমা ও সিওপিডিতে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু পাঁচ দশক ধরে এর চিকিৎসা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসেনি বলে উল্লেখ করেন এই অধ্যাপক।
প্রতিবছর অ্যাজমা ও সিওপিডিতে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু পাঁচ দশক ধরে এর চিকিৎসা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসেনি বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক মোনা বাফাডহেল।
শ্বাসযন্ত্র ও ইমিউনোলজিসংক্রান্ত সমস্যায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় সর্বাধিক বিক্রিত ওষুধ হলো ফ্যাসেনরা। এ বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪৩৬ মিলিয়ন (৪৩ দশমিক ৬ কোটি) ডলারের এ ওষুধ বিক্রি হয়েছে, যা এক বছর আগের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।
নতুন এ গবেষণায় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড। চিকিৎসা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট রেসপাইরেটরি মেডিসিন’-এ প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা ফলাফল।