চীন সীমান্তবর্তী শান রাজ্যে মিয়ানমারের জান্তার ঘনিষ্ঠ অনলাইন প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেশ বিরক্ত চীন। এই রাজ্যের অনেক এলাকা বিদ্রোহীদের দখলে যাওয়ায় প্রতারক চক্র অনেকটা কোণঠাসা। এতে লাভ চীনেরও। তা ছাড়া বিদ্রোহীরা দেশজুড়ে অপারেশন ১০২৭ সম্প্রসারণ করেছে। সাফল্যও পাচ্ছে। এখন চীন দুই পক্ষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলতে চাইছে। ১৫ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সে এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল গত জুনে চীন সীমান্তের কাছে প্রভাবশালী তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। তাঁদের আলোচনার টেবিল নীল কাপড়ে ঢাকা ছিল। টেবিলের ওপর সাজানো ছিল ফুলের তোড়া।
সামরিক জান্তার সঙ্গে আলোচনায় বসলেও ভেতরে–ভেতরে বিদ্রোহীরা অন্য কিছুর পরিকল্পনা করে যাচ্ছিল। কারণ, থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত ওই সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তত দিনে গোপনে অপারেশন ১০২৭ নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে ফেলেছিল। সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গত অক্টোবরে তারা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। তাদের হামলা শুরু হলে ২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায় সামরিক জান্তা।
বিদ্রোহী জোটের অন্যতম শরিক চীনা জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) মুখপাত্র কিয়াও নায়াং বলছিলেন, ‘আমরা যখন জুনে সামরিক জান্তার সঙ্গে বৈঠক করি, তত দিনে আমরা অভিযানের প্রস্তুতি অনেকটা এগিয়ে নিয়েছিলাম।’
অপারেশন ১০২৭–এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত শীর্ষ বিদ্রোহী নেতা, বিশ্লেষক এবং এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন অন্তত এক ডজন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। অভিযান যেহেতু চলমান, তাই অনেকে কথা বললেও নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
কীভাবে অভিযানের পরিকল্পনা হয়েছিল, কীভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইয়ের জন্য বিদ্রোহীদের ঐক্যবদ্ধ ব্রিগেড তৈরি করা হয়েছে, চীন কেন সামরিক জান্তার ওপর হতাশ হয়ে পড়ছে—এমন নানা বিষয়ে তাঁরা খোলামেলা কথা বলেন। অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, এসব বিষয় মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের বেশ সাহসী করে তুলেছে।
গত অক্টোবরের শেষ দিকে অভিযান শুরুর পর এর নাম দেওয়া হয় অপারেশন ১০২৭। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে এই লড়াই দেশজুড়ে এই বিদ্রোহী জোটসহ অন্যান্য গোষ্ঠীকে বিজয় এনে দিচ্ছে। জান্তা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করেছিল।
অভ্যুত্থানের পর সামরিক জান্তা প্রতিবাদকারীদের ওপর ব্যাপক দমন–পীড়ন শুরু করে। তাদের সেই কর্মকাণ্ডই তৃণমূল বিদ্রোহীদের ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং কিছু জাতিগত গোষ্ঠী জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। তাতমাদো নামে পরিচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত ছয় দশকের মধ্যে পাঁচ দশক মিয়ানমারের শাসনক্ষমতায়। এই বাহিনী নৃশংসতা ও পোড়ামাটির নীতি গ্রহণের মাধ্যমে দেশটিতে একধরনের ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে। সেনাবাহিনী বলছে, তারা যাদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে বিবেচনা করে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেবে তারা।
চার বিদ্রোহী নেতা বার্তা সংস্থাকে জানান, থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের দুই সদস্যসহ অন্য আরও পাঁচটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০২২ সালের শুরুতে ৬১১ নামে নতুন ব্রিগেড গঠন করে। এক বিদ্রোহী নেতা বলেন, এই ব্রিগেডে কয়েক হাজার যোদ্ধা রয়েছেন।
সংঘাত প্রতিরোধ ও সমাধান নিয়ে কাজ করা ওয়াশিংটনভিত্তিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিসের (ইউএসআইপি) মতে, মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত এই ব্রিগেড অভূতপূর্ব সহযোগিতার নজির স্থাপন করেছে। ভিন্ন ভাষাভাষী এবং ভিন্ন ঐতিহ্যের মানুষ হওয়ার পরও যোদ্ধারা একসঙ্গে কাজ করছেন।
দুই বিশ্লেষক বলছিলেন, সীমান্ত অঞ্চলে বেপরোয়া অপরাধের কারণে যখন সামরিক জান্তার ওপর বেইজিংয়ের ক্ষোভ বেড়ে চলছে, ঠিক সেই সময় এই অভিযান শুরু হয়েছে। ফলে চীনের এই অবস্থান বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জন্য আরও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে।
সীমান্ত এলাকায় সামরিক জান্তার মিত্র জাতিগত চীনা কয়েকটি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে বেইজিংয়েরও সুসম্পর্ক রয়েছে। চীন সীমান্তে অনলাইনে নানা কেলেঙ্কারির সঙ্গে এসব গোষ্ঠী জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। চীনসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক মানুষ এদের হাতে প্রতারিত হচ্ছে। কিন্তু তাদের দমনে সামরিক জান্তা কিছুই করছে না বা করতে পারছে না, যা চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে।
ইউএসআইপির হিসাবমতে, গত অক্টোবর পর্যন্ত মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে এক শ–এর বেশি বাড়ি থেকে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই চীনা নাগরিক। এখানে শ্রমিক, বিশেষ করে পাচারের শিকার মানুষ ইন্টারনেটে প্রতারণার শিকার হচ্ছে বেশি।
মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সীমান্তবর্তী এসব চক্র চীনের নিরাপত্তার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বৈঠকে চীনা কর্মকর্তারা মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে সীমান্তের ওই সব বাড়ি গুঁড়িয়ে দিতে এবং প্রতারক চক্রকে দমন করতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। তারা না পারলে চীন নিজেই সেখানে ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়।
সাম্প্রতিক লড়াইয়ে অনলাইন কেলেঙ্কারি হয়, এমন বেশ কিছু আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখানে ফাঁদে আটকে পড়া অনেক বিদেশি পালিয়ে যায়। মিয়ানমারের জান্তা বা চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় ওই লড়াই সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
গত ২৯ নভেম্বর মিয়ানমারের জান্তা নেতা জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেছেন, দীর্ঘদিনের জিইয়ে থাকা সমস্যার কারণেই চীন সীমান্তে লড়াই হয়েছে। ওই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জোর দিচ্ছে।
সামরিক জান্তার একজন মুখপাত্র ১১ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থাকে বলেন, তখন থেকে চীনের মধ্যস্থতায় সামরিক সরকার থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ওই মুখপাত্র বিষয়টি নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলেননি।
বেইজিং বলছে, তারা বিদ্রোহীদেরে সঙ্গে জান্তার এ ধরনের আলোচনাকে সমর্থন করে। অন্যদিকে অ্যালায়েন্স গত বুধবার বলেছে, তারা ‘একনায়ককে’ পরাজিত করতে বদ্ধপরিকর।
চীনের একজন কূটনীতিক গত নভেম্বরে বলেছিলেন, বেইজিং অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। তবে তিনি চীনের বাসিন্দাদের রক্ষা ও সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, টেলিকম প্রতারণা প্রতিরোধে তাঁরা মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছেন। এই কৌশল বেশ সফল হয়েছে এবং অনেক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, সাইবার কেলেঙ্কারিসহ আন্তসীমান্ত অপরাধ দমনে চীন কাজ চালিয়ে যাবে। একই সঙ্গে দুই দেশের সীমান্তে স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে তারা কাজ অব্যাহত রাখবে।
চীনের সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে অপারেশন ১০২৭ প্রথম শুরু হয়। সেখানে এমএনডিএএ, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ও আরাকান আর্মি (এএ)—এই তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের নেতৃত্বে যোদ্ধারা লড়াই করছে। এই জোট দাবি করেছে, তারা এক মাসের কম সময়ের মধ্যে রাজ্যে ১৫০টি সামরিক ফাঁড়ি, পাঁচটি শহর ও চারটি সীমান্ত ফটক দখল করেছে।
নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের বিবেচনায় বিদ্রোহীদের দেওয়া হিসাব বিশ্বাস করার মতো। কারণ, সামরিক জান্তা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু না বললেও তারা স্বীকার করেছে, কিছু জায়গার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে তারা।
এমএনডিএএর মুখপাত্র কিয়াউ নায়াং বলেন, ব্রিগেড ৬১১ বহু জাতিগোষ্ঠীর যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত। লড়াইরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নেতারাও নিশ্চিত করেছেন, ব্রিগেডে মিয়ানমারের বেসামরিক ছায়া সরকারের সৈন্য, মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী এএ এবং বামার পিপলস লিবারেশন আর্মির (বিপিএলএ) যোদ্ধারা রয়েছেন। অধিকাংশ বামার জাতিগোষ্ঠীর সদস্য নিয়ে নতুন করে বিপিএলএ গঠিত হয়েছে।
এমএনডিএএ অনুমোদিত ব্রিগেড ৬১১–এর কয়েক শ সৈন্যের একটি ছবি গত জানুয়ারিতে প্রকাশ করা হয়। গ্র্যাজুয়েশন উপলক্ষে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত সৈন্যদের ওই ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল। বার্মা ও চীনা ভাষায় লেখা একটি বড় তাঁবুতে বসে সেই অনুষ্ঠান দেখেছিলেন বিদ্রোহী নেতারা।
বিপিএলএর মুখপাত্র লিন লিন বলেন, ব্রিগেড ৬১১–এর কিছু সৈন্য অভিযান সামনে রেখে ড্রোন নিয়ে মহড়ায় অংশ নেন।
কারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্সের (কেএনডিএফ) নেতা খুন বেদু বলেন, মহড়ায় ড্রোন হামলার পর বিদ্রোহী স্থলযোদ্ধারা অভিযান চালান। এই কৌশলই সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিদ্রোহীদের ‘বড় সাফল্য’ এনে দিয়েছে।
থাইল্যান্ড সীমান্ত অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা কেএনডিএফ নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্রিগেড ৬১১–তে এই গোষ্ঠীর যোদ্ধারাও রয়েছেন।
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে লিখেছেন, এমন একজন হচ্ছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে চীনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ঝু জিয়াংমিং। তিনি বলেন, এই ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার অর্থ হচ্ছে বিদ্রোহীরা ‘সব জায়গায় জেগে উঠছে এবং তাদের মোকাবিলায় সামরিক জান্তার পর্যাপ্ত সেনাসদস্য নেই।’
মিন অং হ্লাইং গত নভেম্বরে বলেছিলেন, ‘বিদেশি ড্রোনবিশেষজ্ঞদের’ সহায়তায় বিদ্রোহীরা সামরিক বাহিনীর ওপর ২৫ হাজারের বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। বিদ্রোহীদের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের কারণে অনেক জায়গায় সৈন্যরা ফাঁড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
অলাভজনক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা রিচার্ড হোরসি বলেন, এত সব বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সেনাবাহিনীর পর্যাপ্ত সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে এবং যেকোনো মূল্যে তাদের জয়ী হওয়ার মতো ‘দৃঢ় মনোবল’ রয়েছে।
সেই অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে জান্তাবিরোধী অভিযান দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় সাগাইংসহ ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যে লড়াই চলছে। বিভিন্ন এলাকায় বেসামরিক জাতীয় ঐক্যের সরকারের (এনইউজি) সমর্থিত পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে। এনইউজিতে সু চির প্রশাসনের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
এনইউজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের দাবি করছে। তারা কূটনৈতিকভাবে জান্তা সরকারকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। এনইউজি সমর্থিত পিডিএফের কমান্ডে অন্তত ৩০০ ইউনিট রয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও সরকারের অনলাইন পোস্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে, বেইজিংয়ের কূটনীতি সত্ত্বেও মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে অনলাইন প্রতারণার কেন্দ্রগুলো বন্ধ না হওয়ায় চলতি বছর ধীরে ধীরে চীনের হতাশা বাড়তে থাকে। চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের কথিত অনলাইন প্রতারকদের গ্রেপ্তারের খবর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করছে। সেগুলোতে ভিউ হচ্ছে অনেক।
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়, অনলাইন প্রতারক চক্রের বেশির ভাগেরই মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। এসব চক্রের খপ্পরে পড়ে চীনা জনগণ সম্পদ হারাচ্ছে। তাদের অধিকার ও স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
এই প্রতারক চক্র নিয়ে চীনে নো মোর বেটস নামে সিনেমাও বানানো হয়েছে। গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের সঙ্গে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীন এসব বিষয় উত্থাপন করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীন কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী, বিশেষ করে জাতিগত চীনা গোষ্ঠীর ওপর প্রভাব খাটাচ্ছে। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
মিয়ানমারে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্কট মার্শেল বলেন, ১০২৭ অপারেশন চালানোর সময় চীন যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে, বিদ্রোহীরা ঠিক সেভাবে কাজ করছে না। এরপরও চীন তাদের ঘাঁটাচ্ছে না। কারণ, চীনের মতো কাজ না করুক, তারা অন্তত অনলাইন প্রতারকদের আস্তানায় হামলা চালাচ্ছে—এটাই–বা কম কিসের। এতে লাভ তো চীনেরও হচ্ছে।
চীনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ঝু বলেন, চীন সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়। তিনি বলেন, ‘যদি দুই বন্ধু লড়াই করে, তাতে আমাদের কারও পক্ষ নেওয়ার সুযোগ নেই। কোনো পক্ষকে চীন সহযোগিতা করবে না। তবে কেউ চীনের স্বার্থে আঘাত করলে, আমরা বিরোধী পক্ষকে সহায়তা করব।’