বয়স ৩০–এর কোটাও পার হয়নি। এখনই কোটি কোটি ডলারের মালিক হয়ে গেছেন। অধিকাংশই অবশ্য পারিবারিক সূত্রে বিপুল এ সম্পদের মালিক হয়েছেন। অল্প বয়সেই শতকোটি ডলারের মালিকদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন, এমন শীর্ষ ১০ তরুণ ধনীর তালিকা প্রকাশ করেছে ফোর্বস সাময়িকী। বয়সের ক্রমানুসারে করা এ তালিকায় থাকা ব্যক্তি কারা, আসুন দেখে নেওয়া যাক—
লাতিন আমেরিকার সর্ববৃহৎ বৈদ্যুতিক মোটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডব্লিউইজি। ব্যক্তিমালিকানার এ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বেশি শেয়ার যাঁদের নামে, তাঁদের একজন ব্রাজিলের লিভিয়া ভয়েট। লিভিয়ার দাদা ডব্লিউইজির সহপ্রতিষ্ঠাতা। লিভিয়ার সম্পদের আর্থিক মূল্য ১৩০ কোটি ডলার। সবচেয়ে বেশি শেয়ারমালিকদের একজন হলেও ২০ বছরের এ তরুণী এখনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের আসনে বসেননি। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত তিনি।
ইতালির প্রয়াত ধনকুবের লিওনার্দো দেল ভেক্কিওর ছেলে ক্লেমেন্তে দেল ভেক্কিও। লিওনার্দো দেল ২০২২ সালে মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এসিলর লুক্সঅত্তিকার চেয়ারম্যান ছিলেন। মিলান শহরের বাসিন্দা ক্লেমেন্তে বাবার মৃত্যুর পর দেশে-বিদেশে পারিবারিক বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের মালিক হন। তাঁর বর্তমান সম্পদের আর্থিক মূল্য ৫২০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০ বছরের এই তরুণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়ে আগ্রহী। তিনি লেখাপড়ার পর এই ক্ষেত্রগুলোতে ক্যারিয়ার গড়তে চান।
সর্ববৃহৎ অনলাইন গেমিং প্রতিষ্ঠান নেক্সনের শেয়ারের একটি বড় অংশের মালিক দক্ষিণ কোরিয়ার ২০ বছরের তরুণী কিম জং-ইউন। তিনি শেয়ারের বেশির ভাগই তাঁর প্রয়াত বাবা কিম জং-জুর উত্তরসূরি হিসেবে পেয়েছেন। কিম জং-জু ১৯৯৪ সালে নেক্সন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২২ সালে ৫৪ বছর বয়সে তিনি মারা গেলে কোম্পানিতে তাঁর শেয়ারের একটি বড় অংশ তাঁর দুই মেয়ের নামে চলে যায়। কিম জং-ইউন ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের মালিক।
জার্মানিজুড়ে যেখানেই যাবেন, ডিএম দেখতে পাবেন। ডিএম–এর ৩ হাজার ৭০০–এর বেশি শোরুম রয়েছে। ওষুধ ও প্রসাধনীর এই চেইন শপের ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ২২ বছর বয়সী জার্মান তরুণ কেভিন ডেভিড লেম্যান। তাঁর সম্পদের আর্থিক মূল্য ৩১০ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছর কেভিনের বাবা প্রতিষ্ঠানটিতে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেন। ২০১৭ সালে ছেলের কাছে নিজের সব শেয়ার হস্তান্তর করেন তিনি।
কিম জং-ইউনের বড় বোন কিম জং-মিন। ছোট বোনের মতো তিনিও বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দা কিম জং–মিনের বয়স ২২ বছর। তিনিও ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের মালিক। এত ধনী হয়েও দুই বোন সাধারণ জীবন যাপন করেন।
ইতালির প্রয়াত ধনকুবের লিওনার্দো দেল ভেক্কিওর ছয় সন্তানের একজন লুকা দেল ভেক্কিও। লিওনার্দো দেল ভেক্কিও ২০২২ সালে মারা যান। মৃত্যুর পর নিজ মালিকানায় থাকা সম্পদ তাঁর সন্তানদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দেওয়া হয়। ক্লেমেন্তে দেল ভেক্কিও পারিবারিক ব্যবসায় খুব একটা আগ্রহী না হলেও মিলান শহরের বাসিন্দা ২৩ বছরের লুকা দেল ভেক্কিও এ ব্যবসায় সক্রিয়ভাবে জড়িত আছেন।
ফ্রান্সের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দাঁসো এভিয়েশন গড়ে তুলেছিলেন রেমির প্রপিতামহ মাহসেল দাঁসো। রেমি দাঁসোর বাবা অলিভিয়ের দাঁসো রাজনীতি করতেন। ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদের একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন তিনি। ২০২১ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। প্যারিসের বাসিন্দা ২৩ বছরের রেমি পারিবারিক সূত্রে ২১০ কোটি ডলারের মালিক।
টাটা সন্সের সাবেক চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির ছেলে জাহান মিস্ত্রি। ২০২২ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় সাইরাসের মৃত্যুর পর জাহান টাটা সন্সের প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। ভারতের মুম্বাই শহরের বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সী জাহান পারিবারিক আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মালিক। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৯০ কোটি মার্কিন ডলার। আয়ারল্যান্ডের নাগরিক তিনি।
তালিকার সবচেয়ে কম বয়সী তরুণী লেভিয়া ভয়েটের বড় বোন ডোরা ভয়েট। ব্রাজিলের ফ্লোরিয়ান এলাকার বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সী এই তরুণী ১৩০ কোটি মার্কিন ডলারের মালিক। ২০২০ সালে তিনি প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন। ছোট বোনের মতো তিনিও ডব্লিউইজির কোনো পদে নেই।
ফিরোজ মিস্ত্রি জাহান মিস্ত্রির বড় ভাই। বাবা সাইরাস মিস্ত্রির মৃত্যুর পর তিনিও টাটা সন্সের প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা ফিরোজের বয়স ২৭ বছর। ভাইয়ের মতো তাঁর সম্পদের আর্থিক মূল্য ৪৯০ কোটি মার্কিন ডলার। তিনি ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করেছেন। একজন দক্ষ উদ্যোক্তা ও দূরদর্শী ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে।