নিখোঁজ সাবমেরিনে রয়েছে মাত্র কয়েক ঘণ্টার অক্সিজেন

‘টাইটান’ সাবমেরিন
ছবি: রয়টার্স

আটলান্টিকের তলদেশে হারিয়ে যাওয়া সাবমেরিনটিতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অক্সিজেনের মজুত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাবমেরিনটি উদ্ধারে আজ বৃহস্পতিবারও জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকারী দল। এদিকে সাবমেরিনটি নিখোঁজ হওয়া অঞ্চলে সমুদ্রের তলদেশ থেকে বেশ কয়েকবার শব্দ পাওয়া গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই শব্দ সাবমেরিনটি থেকে এসেছে, এমনটা না–ও হতে পারে।

টাইটান নামের ওই সাবমেরিনের মালিক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ওশানগেট। আটলান্টিকের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য এক চালকসহ পাঁচ আরোহীকে বহন করছিল সাবমেরিনটি। স্থানীয় সময় গত রোববার কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জন উপকূল থেকে একটি জাহাজে করে সেটিকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের স্থলে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মাথায় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে সেটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ওশানগেটের দেওয়া তথ্য বলছে, সাবমেরিনটিতে মোট ৯৬ ঘণ্টা বা ৪ দিনের অক্সিজেনের মজুত ছিল। সে হিসাবে স্থানীয় সময় আজ সকাল নাগাদ অক্সিজেন শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন সাবমেরিনটিতে এখনো বিদ্যুৎ–সংযোগ আছে কি না এবং সেটির আরোহীরা গত কয়েক দিনে কী পরিমাণ অক্সিজেন খরচ করেছেন সেসব বিষয়। ওশানগেট আশা করছে, সাবমেরিনটি অক্ষত আছে।

সাবমেরিনটিতে আরোহীরা বেঁচে আছেন বলে আশা করছেন তাঁদের পরিবারের সদস্য ও উদ্ধারকারীরাও। গত মঙ্গল ও গতকাল বুধবার কানাডার উদ্ধারকারী দল আটলান্টিকের তলদেশ থেকে কিছু শব্দ শনাক্তের পর ওই আশা আরও জোরদার হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড বলছে, ওই শব্দের কোনো উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। এগুলো টাইটান থেকে আসছে, এমন না–ও হতে পারে।

১৯১২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল টাইটানিক। সে সময়ের সবচেয়ে বড় এ জাহাজের প্রথম যাত্রা ছিল সেটি। সে যাত্রায়ই এক হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় টাইটানিক। মৃত্যু হয় এক হাজার পাঁচ শতাধিক যাত্রীর। পরে ১৯৮৫ সালে উত্তর আটলান্টিকের তলদেশে প্রায় ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়।

উত্তর আটলান্টিকে যে অঞ্চলজুড়ে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে, তার আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের দ্বিগুণ। শেষ মুহূর্তে এসে উদ্ধারকাজ আরও জোরদার করতে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দিয়েছে ফ্রান্সের গবেষণা জাহাজ ‘আটলান্টা’। জাহাজটিতে ‘ভিক্টর–৬০০০’ নামের একটি রোবট রয়েছে। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের চেয়ে বেশি গভীরতায় পৌঁছাতে পারে সেটি। আর রোবটটি পানির তলদেশে আটকে পড়া কোনো যান উদ্ধার করে ওপরে তুলে আনতে পারে। এ ছাড়া পানির নিচ থেকে টেনে তুলতে পারে এমন বিশেষ ব্যবস্থাসম্পন্ন জাহাজ পাঠাচ্ছে মার্কিন নৌবাহিনী।

সাবমেরিনটিতে থাকা পাঁচ আরোহী হলেন হ্যামিশ হার্ডিং, শাহজাদা দাউদ ও তাঁর ছেলে সুলেমান দাউদ, পল অঁরি নিরজিওলেট ও স্টকটন রাশ। ৫৮ বছর বয়সী হ্যামিশ হার্ডিং একজন ব্রিটিশ অভিযাত্রী। শাহজাদা দাউদ (৪৮) পাকিস্তানের একটি ধনী পরিবারের সদস্য। তাঁর ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯) শিক্ষার্থী। আর ৭৭ বছর বয়সী পল অঁরি ফরাসি নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি।

টাইটানের ধ্বংসাবশেষ যেখানে রয়েছে, সেখানে গত রোববার সাবমেরিনটিকে নিয়ে গিয়েছিল ‘পোলার প্রিন্স’ নামের একটি জাহাজ। এই জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান সেন লিট বলেছেন, সাবমেরিনটিতে এখনো জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল ছাড়বেন না তাঁরা। আর হ্যামিশ হার্ডিংয়ের বান্ধবী জ্যানিকে মিকেলনেসের ভাষ্য, তাঁদের যদি জীবিত উদ্ধার করা যায়, তা হবে একটি অলৌকিক ঘটনা।