কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, কানাডা ভারতের সঙ্গে কাজ করতে চায়। তারা নয়াদিল্লিকে কোনো উসকানি দিতে চায় না। কানাডা সব সময় আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একই সঙ্গে তিনি আবারও বলেছেন, ভারতীয় এজেন্টরাই শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকেত পারেন। এর যথেষ্ট ‘বিশ্বাসযোগ্য কারণ’ রয়েছে।
ভারতের সর্বশেষ অভিযোগ ও ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর কানাডার প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের এক ফাঁকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। তাঁদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও তাঁর আগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি গত সোমবার যা বলেছি, তার পেছনে বিশ্বাসযোগ্য বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ভারত সরকারের এজেন্টরাই কানাডার মাটিতে কানাডার নাগরিককে হত্যায় জড়িত থাকতে পারে।’
খালিস্তান আন্দোলনের নেতা ও শিখ সম্প্রদায়ের হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যকাণ্ডের পর ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে গতকাল নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছে, কানাডা সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় হয়েছে। একই সঙ্গে তারা কানাডার নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে।
সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর এক বক্তব্যের পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়। তিনি পার্লামেন্টে এক বিবৃতিতে বলেন, শিখ সম্প্রদায়ের নেতা কানাডার নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারতের এজেন্টরা জড়িত।
গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে গুরুদুয়ারার সামনে খুন হন হরদীপ সিং।
ট্রুডোর এই বক্তব্যের পর কানাডা ও ভারত দুই দেশের কূটনীতিকদের পাল্টপাল্টি বহিষ্কারের পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ নেয়। গতকাল ভারত বলেছে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করলেও কখনো নয়াদিল্লির সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁরা কোনো কিছু শেয়ার করেননি।
ট্রুডো বলেন, ‘আইনের শাসনের দেশ হিসেবে ওই সব প্রক্রিয়া প্রকাশ করার ক্ষেত্রে নির্ভুল ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা আমাদের রয়েছে। এটাই আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। একই সময়ে আমরা নিশ্চিত করতে চাই, কানাডার নাগরিকেরা সুরক্ষিত। আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক ন্যায়নীতির পাশে রয়েছি।’
ট্রুডো বলেন, ‘আমরা ন্যায়ভিত্তিক শাসনের পাশে রয়েছি। আমরা আইনের শাসনের পাশে রয়েছি। একটি দেশের মাটিতে তার দেশের নাগরিককে হত্যায় অন্য দেশের জড়িত থাকা কতটা গ্রহণযোগ্য, আমরা সেই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিন দিন ভারতের গুরুত্ব বাড়ছে। কেবল অঞ্চল হিসেবে নয়, আন্তর্জাতিক দিক বিবেচনায় আমরা ভারতের সঙ্গে কাজ করে যেতে চাই। আমরা ভারতকে উসকানি বা তাদের জন্য কোনো সমস্যার সৃষ্টি করতে চাই না। একই সঙ্গে আমরা দ্ব৵র্থহীন ভাষায় আইনের শাসনের গুরুত্বের কথা বলতে চাই। আমরা কানাডার নাগরিকদের সুরক্ষা এবং তাদের মূল্যবোধের পাশে দাঁড়ানোর গুরুত্বের কথাও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই।’
ট্রুডো বলেন, ‘এ কারণে আমরা ওই ঘটনার সত্য উদ্ঘাটনে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।’
ট্রুডো বলেন, ‘আমার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি ও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তাকে আমি আমার উদ্বেগের কথা বলেছি।’
কানাডার পক্ষ থেকেও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারের প্রতি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে আমাদের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি। আমরা আইনের শাসনের দেশ। আমরা কানাডার নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে এবং আমাদের মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে অব্যাহতভাবে প্রয়োজনীয় কাজ করে যাব। এটাই এখন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’