অ্যান্টার্কটিকার বরফ দ্রুত গলছে। ফলে মহাসাগরগুলোতে পানির প্রবাহ নাটকীয়ভাবে কমে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জলবায়ুর ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব পড়তে পারে, সংকটে পড়তে পারে সাগরের খাদ্যশৃঙ্খল। নতুন এক গবেষণায় এসব আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার–এ গতকাল বুধবার ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বরফ দ্রুত গলে যাওয়ার কারণে অ্যান্টার্কটিকা থেকে মহাসাগরগুলোর গভীরে যে পানির প্রবাহ রয়েছে, তা ২০৫০ সাল নাগাদ ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এর প্রভাব আগামী কয়েক শতক থেকে যেতে পারে।
মহাসাগরের তলদেশে তুলনামূলক ঘন পানির এই প্রবাহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সাগরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে কার্বন, অক্সিজেন ও প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলো পৌঁছে দেয়। পানির প্রবাহ কমে গেলে এ ক্ষেত্রে বড় বাধা আসবে।
গবেষণার ফলাফলে আশঙ্কা প্রকাশ করে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউসাউথ ওয়েলসের অধ্যাপক ম্যাথিউ ইংল্যান্ড বলেন, গবেষণায় যা দেখা গেছে, তা যদি সত্যি হয়, তাহলে গভীর সাগরের স্রোত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ম্যাথিউ ইংল্যান্ড এই গবেষণায় কাজ করেছেন।
এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কিয়ান লি। অন্যদের মধ্যে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (সিএসআইআরও) গবেষকেরা।
গবেষণায় বলা হয়েছে, মহাসাগরের গভীরে পানির প্রবাহ কমে গেলে মহাসাগরগুলো যথেষ্ট পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারবে না। এতে পরিবেশে এই গ্যাসের পরিমাণ বাড়বে। বিভিন্ন অঞ্চলের সাগরে ভেসে থাকা বরফের স্তরে অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খল বিনষ্ট হবে বলে মনে করছেন গবেষণা দলের সদস্য ও সিএসআইআরওর গবেষক স্টিভ রিনটোউল।
ইউনিভার্সিটি অব নিউসাউথ ওয়েলসের ইমেরিটাস অধ্যাপক জন চার্চ বলেন, মহাসাগরের গভীরে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার প্রভাব নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে এটা প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছে যে বর্তমানে যেসব উৎস থেকে ব্যাপক হারে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে মহাসাগর ও জলবায়ুর ওপর বড় প্রভাব আসবে। এটা রুখতে বিশ্ববাসীকে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে হবে।