কোটি কোটি বছর আগে সাগরে রাজত্ব করে বেড়াত দানবাকৃতির হাঙর, যার নাম ‘মেগালোডন’। ছয়তলা উঁচু ভবনের সমান বিশাল শরীর নিয়ে দাপিয়ে বেড়াত এই শিকারি। কিন্তু ৩৫ লাখ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায় পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহদাকার হাঙরের প্রজাতি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মেগালোডনকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে সাগরতলের আরেক হিংস্র শিকারি। কিন্তু কী সেই জলজ্যান্ত আতঙ্ক, যা কিনা মেগালোডনের মতো দানবকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিতে পারে?
আজ থেকে ৪৫ কোটি বছর আগে থেকেই সাগরে বিচরণ ছিল হাঙরের। এ তথ্য মানলে তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, পৃথিবীতে ডাইনোসর, এমনকি গাছ সৃষ্টিরও আগে থেকেই ছিল হাঙরের অস্তিত্ব। আর সেই ধারাবাহিকতায় প্রায় আড়াই কোটি বছর আগে জন্ম হয় মেগালোডনের। এযাবৎ পাওয়া কঙ্কাল ও দাঁতের জীবাশ্ম থেকে ধারণা পাওয়া গেছে, প্রায় ৬০ হাজার কেজি ওজনের বিশাল দানব ছিল এই মেগালোডন। এই শিকারির শুধু ডর্সাল ফিন বা পিঠের পাখনাই ছিল মানুষের আকারের সমান। খাবার ছিল ডলফিন, পরপয়েজ, এমনকি তিমিও।
সাগরতলের ভয়ংকর শিকারি মেগালোডন বিলুপ্ত হওয়ার গল্পটা কিছুটা রহস্যে মোড়ানো। জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা এখানে কিছুটা হলেও আছে, এমন সিদ্ধান্তে আগেই এসেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু একেবারে নিশ্চিহ্নই কীভাবে হয়ে গেল মেগালোডন, সে হিসাবটা যেন মিলছিল না।
২০২২ সালের শুরুতে মেগালোডনের দাঁতের জীবাশ্ম নিয়ে এক গবেষণা প্রকাশ পায়, আর তাতে মেলে বিচিত্র এক তথ্য। গবেষকেরা বলেন, মেগালোডনের নিশ্চিহ্ন হওয়ার পেছনে দায় আছে তুলনামূলক নতুন এক প্রজাতির হাঙরের, যার জন্ম দেড় কোটি বছর আগে। আর সেটা হলো গ্রেট হোয়াইট শার্ক—এখনকার সাগরে সবচেয়ে বড় কয়েকটি প্রজাতির হাঙরের একটি। আকারে মেগালোডনের তিন ভাগের এক ভাগ গ্রেট হোয়াইট, আর ওজন মাত্র দুই হাজার কেজির মতো। বিপরীতে মেগালোডনের ওজন প্রায় ৬০ হাজার কেজি।
এত বিশাল দেহ নিয়েও মেগালোডনের হেরে যাওয়ার কারণ, তার খাবারে ভাগ বসিয়েছিল গ্রেট হোয়াইট। গ্রেট হোয়াইট ও মেগালোডনের দাঁতের তুলনা করে গবেষকেরা দেখতে পেয়েছেন, একই ধরনের খাবার খেত এই দুই প্রজাতির হাঙর। এতে মেগালোডনের খাবারে টান পড়ে।
তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে মিলেছে আরও বিস্ময়কর তথ্য। মেগালোডনের দাঁত থেকেই মিলেছে বিচিত্র এ তথ্য। তা হলো, প্রায় সব প্রজাতির হাঙর শীতল রক্তের হলেও মেগালোডনের রক্ত ছিল উষ্ণ। তার রক্তের তাপমাত্রা ছিল প্রায় ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, মানে আমাদের বসার ঘরের তাপমাত্রার মতোই। আর উষ্ণ রক্তের কারণেই এমন দানবাকৃতি পেয়েছিল মেগালোডন, হয়ে উঠেছিল দক্ষ শিকারি। কিন্তু এই বিশালাকারই আবার কাল হয়ে ওঠে তার জন্য।
সমুদ্রের শীতল পানিতে থাকা এমন বিশালাকৃতির উষ্ণ রক্তের প্রাণীর ক্রমাগত শরীর গরম রাখতে বিপুল শক্তি খরচ হয়। মেগালোডন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সময়টায় পৃথিবীর তাপমাত্রাও কমে আসতে থাকে। নেমে আসে সমুদ্রের পানির স্তরও। তার সঙ্গে দৃশ্যপটে আসে গ্রেট হোয়াইট শার্ক। সম্ভবত এত শত্রুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পৃথিবীর বুকে আর টিকে থাকতে পারেনি মেগালোডন।