এশিয়ার বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জলসীমায় যৌথ নিরাপত্তা পদক্ষেপ বাড়াচ্ছেন কোয়াড নেতারা। স্থানীয় সময় গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ারে এক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের নেতারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরে চীনকে ঘিরে ‘গভীর উদ্বেগ’ থেকেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপান মিলে কোয়াড জোট গঠন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিজ শহর ডেলাওয়ারের উইলমিংটনে কোয়াডের এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন শেষে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে কোয়াড নেতারা বলেন, ‘পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
বাইডেনের আয়োজনে এবারের সম্মেলনে যোগ দেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এবারের সম্মেলন থেকে নেতারা কোয়াড ধরে রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন। কোয়াডকে বাইডেন তাঁর পররাষ্ট্রনীতির অর্জন হিসেবে দেখেন। আগামী ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বাইডেন।
কোয়াড নেতারা আগামী বছর যৌথ উপকূলরক্ষী অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে থাকবে অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। তাঁরা মার্কিন উপকূলরক্ষী জাহাজে করে অভিযান চালাবেন। কর্মকর্তারা বলছেন, চার দেশের পক্ষ থেকে সামরিক সরঞ্জাম সহযোগিতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে উপকূলরক্ষীরা কোথায় কার্যক্রম চালাবেন, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
কোয়াড নেতারা দুই বছর আগে গৃহীত সামুদ্রিক পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় চুক্তি বিস্তৃত করার পরিকল্পনাও করেছেন।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোয়াড সম্মেলন কোনো দেশকে উদ্দেশ করে আয়োজন করা হয়নি। এ উদ্যোগ ঘিরে বেইজিংয়ের কোনো ইস্যু থাকা উচিত নয়। বাইডেন এ সম্মেলনের দলগত আলোচনা শুরুর আগে চীন বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন। যৌথ বিবৃতিতে চীনের নাম উল্লেখ করা না হলেও কোয়াড নেতারা এতে দক্ষিণ চীন সাগর ঘিরে জবরদস্তিমূলক ও ভীতিকর কৌশলের নিন্দা জানান।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন করে সমুদ্রপথের জন্য যে নিরাপত্তা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা চীনকে একটি বার্তা দেবে এবং নিরাপত্তার বিষয়ে কোয়াডের কার্যক্রম জোরদারের বিষয়টি প্রতিফলিত করবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কোয়াড ঘিরে আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি একে বেইজিংকে ঘেরাও করার ও সংঘাত বাড়ানোর প্রচেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন।
কোয়াড নেতাদের যৌথ বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার কঠোর ভাষায় নিন্দা জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নেতারা উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়ার সামরিক সহায়তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন।
কোয়াডের পক্ষ থকে জটিল ও নিরাপত্তা প্রযুক্তিতে সহায়তার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে উন্মুক্ত রেডিও সংযোগ নেটওয়ার্কের মতো বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যগত খাতেও সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, শিগগিরই জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সরে যাচ্ছেন। বাইডেনও সরে যাবেন। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন। এ পরিস্থিতিতে বাইডেন সরে যাওয়ার আগে কোয়াডকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।