বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ প্রমোদতরি

আধুনিক সময়ের প্রমোদতরিগুলো এক–একটি যেন প্রকৌশলের বিস্ময়। উঁচু উঁচু ও বিশাল আকারের প্রমোদতরিগুলো হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে মহাসমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়ায়। এমন বড় বড় জাহাজ একটি দুটি নয়, অনেক আছে। তবে এসব বড় জাহাজের মধ্যে সবচেয়ে বড় কোনগুলো, এমন প্রশ্ন অনেকের মনে ঘুরপাক খেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল এমএসএন সবচেয়ে বড় ১০টি প্রমোদতরির একটি তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকায় রয়েছে আইকন অব দ্য সিজ, ইউটোপিয়া অব দ্য সিজ, ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ, সিম্ফনি অব দ্য সিজ, হারমনি অব দ্য সিজ, ওয়েসিস অব দ্য সিজ, অ্যালিউর অব দ্য সিজ, এমএসসি ওয়ার্ল্ড ইউরোপা, কস্টা টসকানা, আরভিয়া।

এসব প্রমোদতরি কারা পরিচালনা করে, এগুলো প্রথম কবে যাত্রা করেছে, সেসব তথ্য প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

আইকন অব দ্য সিজ

আইকন অব দ্য সিজ

বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রমোদতরি আইকন অব দ্য সিজ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাহাজটি যাত্রা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন এই প্রমোদতরির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৯৭ ফুট ও প্রস্থ ২১৯ ফুট। এতে জ্বালানি হিসেবে পরিবেশবান্ধব তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার করা হয়।

জাহাজটিতে ২ হাজার ৮০৫টি কক্ষ আছে। এতে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬০০ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারে।

বিভিন্ন জাহাজের তুলনায় সবচেয়ে বড় সুইমিংপুলটি এখানে আছে। এ ছাড়া এতে আছে ৬টি ওয়াটার স্লাইড যা অন্য জাহাজের তুলনায় বেশি।

ইউটোপিয়া অব দ্য সিজ

ইউটোপিয়া অব দ্য সিজ

এ প্রমোদতরিটিরও মালিক রয়েল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল। এটিরও উদ্বোধনী যাত্রা হয়েছে ২০২৪ সালে। এর সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণক্ষমতা ৬ হাজার ৫০৯ জন। ইউটোপিয়া অব দ্য সিজের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৮৮৫ ফুট ও প্রস্থ ২১০ ফুট। এ জাহাজে পরিবেশবান্ধব তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ক্যানাভেরাল বন্দর থেকে এটি বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করে থাকে।

রয়েল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন ওয়েসিস ঘরানার জাহাজের সর্বশেষ সংস্করণ এটি। তা ছাড়া এটি ওয়েসিস ঘরানার প্রথম কোনো জাহাজ, যেটিতে জ্বালানি হিসেবে এলএনজি ব্যবহার করা হয়।

দ্য ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ

ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ

২০২২ সালে দ্য ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ প্রমোদতরিটি যাত্রা শুরু করে। ওই সময় এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরি ছিল। পরে আইকন অব দ্য সিজ সে জায়গাটি দখল করে নেয়। ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ জাহাজটিও রয়েল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের তৈরি। এটি সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৯৮৮ জন যাত্রী ধারণ করতে পারে। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৮৮ ফুট ও প্রস্থ ২১০ ফুট।

বোর্ডওয়াক, সোলারিয়াম, জিপ লাইনসহ আরও অনেক অত্যাধুনিক ব্যবস্থা আছে এই প্রমোদতরিতে। আর সবকিছু মিলে ওয়ান্ডার অব সিজকে বলা যায় পানিতে ভাসমান পূর্ণাঙ্গ এক অবকাশকেন্দ্র।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ক্যানাভেরাল বন্দর থেকে প্রমোদতরিটি যাত্রা করে থাকে।

দ্য সিম্ফনি অব দ্য সিজ

সিম্ফনি অব দ্য সিজ

২০১৮ সালে ভূমধ্যসাগরে প্রথম এ জাহাজটির যাত্রা শুরু হয়। প্রথম যাত্রাকালে এটিও বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরি ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে আরও বড় বড় প্রমোদতরি তৈরি হলে এটি শীর্ষ স্থানটি হারায়। তবে এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ প্রমোদতরির তালিকায় নাম রয়েছে এটির।

সিম্ফনি অব দ্য সিজের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৮৪ ফুট ও প্রস্থ ২১৬ ফুট। এই প্রমোদতরিটি সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৬৮০ জন যাত্রী ধারণ করতে পারে।

সিম্ফনি অব দ্য সিজ এখন মিয়ামি বন্দর থেকে যাত্রা করে থাকে। এতে যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

হারমোনি অব দ্য সিজ

হারমনি অব দ্য সিজ

রয়েল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন এই প্রমোদতরিটি ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে। তখন এটিও বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। জাহাজটি দুই বছর পর্যন্ত এ খ্যাতি ধরে রেখেছিল। পরে ২০১৮ সালে সিম্ফনি অব দ্য সিজ যাত্রা শুরু করলে এটি শীর্ষ স্থান হারায়। তবে বিশ্বের ১০ বড় জাহাজের তালিকায় দিব্যি অবস্থান বজায় রেখেছে হারমনি অব দ্য সিজ।

প্রমোদতরিটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৮৮ ফুট ও প্রস্থ ২১৬ ফুট। এ জাহাজটির সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণক্ষমতা ৬ হাজার ৬৮৭ জন।

হারমনি অব দ্য সিজ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের গালভেস্টন বন্দর থেকে যাত্রা করে থাকে।

ওয়েসিস অব দ্য সিজ

ওয়েসিস অব দ্য সিজ

রয়েল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন ওয়েসিস অব দ্য সিজ প্রমোদতরিটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৮০ ফুট। এর প্রস্থ ১৯৮ ফুট। এ প্রমোদতরির সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণক্ষমতা ৬ হাজার ৭৭১ জন।

২০০৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো সাগরে যাত্রা করেছিল ওয়েসিস অব দ্য সিজ। এটি ওই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ ছিল। বর্তমানে ওয়েসিস অব দ্য সিজ প্রমোদতরিটি ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের এফটি লডারডেল বন্দর থেকে বিভিন্ন ক্যারিবীয় বন্দরে চলাচল করে থাকে।

অ্যালিউর অব দ্য সিজ

অ্যালিউর অব দ্য সিজ

অ্যালিউর অব দ্য সিজ প্রমোদতরিটির মালিক রয়েল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল। এটি ওয়েসিস অব দ্য সিজ ঘরানার জাহাজ। তবে এটি ওয়েসিস অব দ্য সিজ থেকে সামান্য ছোট। ২০১০ সালে প্রমোদতরিটির যাত্রা শুরু হয়। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৮০ ফুট ও প্রস্থ ১৯৮ ফুট। এটি সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৭৮০ জন যাত্রী ধারণের ক্ষমতা রাখে।

বর্তমানে অ্যালিউর অব দ্য সিজ ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ক্যানাভেরাল বন্দর থেকে যাত্রা করে থাকে। বাহামায় তিন-চার রাত কাটানোর পর যাত্রীদের নিয়ে আবারও বন্দরে ফিরে আসে এটি।

স্কেটিং করার জায়গা থেকে শুরু করে প্রায় ১ হাজার ২০০ গাছপালাসমৃদ্ধ পার্কসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই প্রমোদতরিতে।

এমএসসি ওয়ার্ল্ড ইউরোপা

এমএসসি ওয়ার্ল্ড ইউরোপা

এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা যতগুলো বড় বড় প্রমোদতরি নিয়ে আলোচনা করেছি, তার সবগুলো ছিল রয়েল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন। তবে এমএসসি ওয়ার্ল্ড ইউরোপা জাহাজটির মালিক এমএসসি ক্রুজেস। ২০২২ সালে ওয়ার্ল্ড ইউরোপার যাত্রা শুরু হয় এবং এটি বিশ্বের শীর্ষ ১০ বড় প্রমোদতরির তালিকায় নাম লেখায়। প্রমোদতরিটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৯৪ ফুট ও প্রস্থ ১৫৪ ফুট। এর সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণক্ষমতা ৬ হাজার ৭৬২ জন।

জাহাজটি কাতারের বন্দর থেকে যাত্রা করে থাকে। ২০২২ সালে দোহায় বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর চলাকালে এ জাহাজটিকে ভাসমান হোটেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড ইউরোপায় জ্বালানি হিসেবে পরিবেশবান্ধব তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কস্টা টসকানা

কস্টা টসকানা

কস্টা টসকানা প্রমোদতরিটি পরিচালনা করে কস্টা ক্রুজেস নামক প্রতিষ্ঠান। এটি ওই কোম্পানির তৈরি সবচেয়ে বড় প্রমোদতরি। ২০২১ সালে জাহাজটির যাত্রা শুরু হয়।

কস্টা টসকানার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১০৬ ফুট। আর প্রস্থ ১৩৮ ফুট। প্রমোদতরিটি সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৫৪ জন যাত্রীকে ধারণ করতে পারে।

কস্টা টসকানা ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন বন্দরে চলাচল করে থাকে।

আরভিয়া

আরভিয়া

২০২২ সালে প্রথম যাত্রা করে আরভিয়া। এটি পি অ্যান্ড ও ক্রুজেসের মালিকানাধীন একমাত্র প্রমোদতরি, যেটি সবচেয়ে বড় ১০ জাহাজের তালিকায় জায়গা পেয়েছে। তখন এটি যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন থেকে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের দিকে গিয়েছিল। আরভিয়ার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৩০ ফুট ও প্রস্থ ১৩৮ ফুট। এটিতে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৬৮৫ জন যাত্রী উঠতে পারেন।

গ্রীষ্মকালে ভূমধ্যসাগরের বুকে গা ভাসায় আরভিয়া। আর শীতকালে এটি ক্যারিবীয় সাগরে চলাচল করে থাকে।