দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশে এসেছিলেন একবারই।
১৯৯৭ সালের মার্চে তিনি ঢাকায় আসেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। তখন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট। ওই অনুষ্ঠানে ম্যান্ডেলা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল।
১৯৯৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ মার্চ, তিন দিনের এ সফরটিই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিকামী মানুষের নেতার প্রথম ও শেষ ঢাকা সফর। ওই সফরে আসার আগে শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না ম্যান্ডেলার। অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি ঢাকায় আসতে দ্বিধা করেননি। স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের আত্মত্যাগে শ্রদ্ধা জানাতে ম্যান্ডেলার জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো উপলক্ষ ছিল না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর যেমন আগ্রহ ছিল, তেমনি তাঁর মুক্তির প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ যুক্ত থাকায় এ দেশটির প্রতি তাঁর ছিল অন্যরকম ভালোবাসা।
নেলসন ম্যান্ডেলা ২৫ মার্চ ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৬ মার্চ সকালে আরাফাত ও ডেমিরেলকে নিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছান নেলসন ম্যান্ডেলা। একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য দেন তিন নেতা। এরপর স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপণ করেন।
স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিকতার পর ম্যান্ডেলাসহ তিন নেতা পৌঁছান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যেখানে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নেলসন ম্যান্ডেলা।
ভাষণে ম্যান্ডেলা বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে এমন একটি জাতিকে শ্রদ্ধা জানাতে আমি বাংলাদেশে এসেছি। রক্তস্নাত এ স্বাধীনতা উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে এসে আজ আমি বলছি— নিপীড়ন ও ঔপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে বের হয়ে স্বাধীনতার পথ কখনোই সহজ নয়।’
ম্যান্ডেলা সেদিন আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। এ উপমহাদেশের জনগণের সঙ্গে অংশীদারি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে আজ এখানে দাঁড়িয়ে আমিও বাংলার বন্ধু হতে চাই। বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উদ্যাপন করছে, দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্র তখন শৈশব পেরোচ্ছে। আমরা বর্ণবৈষম্যের অন্ধকার থেকে স্বাধীনতার ভোরের পথে হামাগুড়ি দিচ্ছি।’
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা সংগ্রামে অব্যাহত সমর্থনের জন্য তিনি সেদিন অকুণ্ঠ চিত্তে বাংলাদেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
ম্যান্ডেলা বলেন, ‘অনেক দূরে থেকেও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাপারে উদাসীন ছিল না বাংলাদেশের মানুষ। কারণ সবাই স্বাধীন না হলে স্বাধীনতা অর্থবহ হয় না, এটা আপনারা জানেন। বাংলাদেশের একজন বন্ধু হিসেবে আমি এখানে দাঁড়িয়ে বলতে চাই, ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’
ওই দিন বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির দেওয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেন ম্যান্ডেলা। এরপর রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন।