খরা ও যুদ্ধের কারণে বিশ্বের চার দেশ ইয়েমেন, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান ও নাইজেরিয়ার দুই কোটির বেশি মানুষ অনাহার তথা দুর্ভিক্ষের হুমকিতে রয়েছে। জাতিসংঘ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, এ কারণে বিশ্ব ১৯৪৫ সালের পর সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটের মুখে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সংস্থার প্রধান স্টিফেন ও’ব্রায়ান গত শুক্রবার নিউইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদের সভায় বলেন, ‘মারাত্মক বিপর্যয়’ এড়াতে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ৪৪০ কোটি ডলার সহায়তা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ ইতিমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, চলতি বছর না খেয়ে ১৪ লাখ শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
ও’ব্রায়ান নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের এক সংকটময় সময় পার করছি। চলতি বছরের শুরুতেই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। এখন চারটি দেশে দুই কোটির বেশি মানুষ অনাহার ও দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। সম্মিলিত ও সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টা না নেওয়া হলে এসব মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আরও বহু লোক এতে ভুগবে এবং বিভিন্ন রোগে মৃত্যুবরণ করবে।’
বিশ্ব সংস্থার মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান আরও বলেন, ওই অঞ্চলে শিশুদের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে এবং তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তাদের ভবিষ্যৎ, জীবিকার সম্ভাবনা ও আশা হারিয়ে যাবে।
জাতিসংঘ বলছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও সংঘাতের জেরে ওই অঞ্চলে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর স্থিতিশীলতা দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে অনেকে বাস্তুচ্যুত হবে। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের ছোটাছুটি অব্যাহত থাকবে। এতে গোটা অঞ্চলে আরও বেশি অস্থিতিশীলতা দেখা দেবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে একই ধরনের আহ্বান জানান। তিনি সে সময় বলেছিলেন, ২০১৭ সালে জাতিসংঘ ওই দেশগুলোতে সহায়তার জন্য মাত্র নয় কোটি ডলারের তহবিল জোগাড় করতে পেরেছে।
ও’ব্রায়ানের মতো গুতেরেসও ওই চার দেশের জন্য আরও বেশি আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানান।
আফ্রিকার দেশ তিনটিতে গত বছর থেকে দারিদ্র্যের মর্মান্তিক কিছু চিত্র দেখা যাচ্ছে। অতি রোগা শিশুরা কোনোমতে বেঁচে আছে। দেখা যাচ্ছে, চার বছরের শিশুদের আকৃতি নবজাতকের চেয়ে বেশি নয়। মায়েরা তাঁদের মুমূর্ষু সন্তানদের রক্ষায় কিছুই করতে পারছেন না।
মধ্যপ্রাচ্যের গৃহযুদ্ধকবলিত দেশ ইয়েমেনে প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। অথচ যে অসুখে তারা মারা যাচ্ছে, তা প্রতিরোধযোগ্য। পাঁচ বছরের কম বয়সী পাঁচ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। জাতিসংঘের অনুমান, ইয়েমেনে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুর জন্য মানবিক ত্রাণ প্রয়োজন। মূলত হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর দুই বছরব্যাপী লড়াইয়ের কারণে এমন পরিস্থিতি।
চারটি দেশে অব্যাহত সংঘাত, আইনের শাসনের অভাব ইত্যাদি কারণে ত্রাণ ঠিকমতো পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। জ্বালানির ঘাটতি এবং রাস্তাঘাটের দুরবস্থার জন্যও সমস্যা হচ্ছে। জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা বলেছে, দক্ষিণ সুদানে এক লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে। আরও কয়েক লাখ এ বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে।
জাতিসংঘ বলছে, দক্ষিণ সুদানের ৪০ শতাংশ (৪৯ লাখ) মানুষের জন্যই জরুরি খাবার ও পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন। দেশটিতে ২০১৩ সাল থেকে অব্যাহত লড়াই, আইনের শাসনের অভাব ও অনুন্নয়ন ত্রাণ পৌঁছানোর পথে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।
এ ছাড়া নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের’ উল্লেখ করে জাতিসংঘ বলেছে, জঙ্গি সংগঠন বোকো হারামকে হটিয়ে দেওয়ার পরপরই বিপর্যয়ের পুরো ভয়াবহতা প্রকাশ পাচ্ছে। জঙ্গিরা সেখানে ১৫ হাজার মানুষকে হত্যা এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষকে বাড়িছাড়া করেছে।
সোমালিয়ায় সর্বশেষ বড় খরায় ছয় বছর আগে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। চলতি মাসের শুরুতে দেশটিতে দুই দিনে ১১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল।