হিজাব অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় পোশাক নয়: কর্ণাটক সরকার

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ইসলাম ধর্মে হিজাব পরা অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় প্রথা বা আচার নয়। তাই হিজাব পরতে মানা করলে তাতে নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হবে না। চলমান হিজাব–বিতর্কের মধ্যে রাজ্য সরকারের পক্ষে কর্ণাটক হাইকোর্টের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছেন রাজ্যটির অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) প্রভুলিঙ্গ নভরগি।

হিজাব–বিতর্ক নিয়ে শুক্রবার কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্তি, বিচারপতি জে এম খাজি ও বিচারপতি কৃষ্ণ এম দীক্ষিতের বেঞ্চের শুনানিতে প্রভুলিঙ্গ নভরগি এ কথা বলেন।

এ সময় প্রভুলিঙ্গ নভরগি বলেন, হিজাব মুসলমানদের আবশ্যিক ধর্মীয় আচরণের মধ্যে পড়ে না। কেন পড়ে না তার ব্যাখ্যা আগামী সোমবার আদালতে উপস্থাপন করবেন। এই আইনজীবী বলেন, ‘মুসলিম নারীদের হিজাব পরার অধিকার ভারতীয় সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদে লিপিবদ্ধ রয়েছে বলে কর্ণাটক সরকার মনে করছে না। তাই হিজাব পরায় বাধা দেওয়াও ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন নয়।’

প্রভুলিঙ্গ নভরগি আরও বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি কর্ণাটক সরকারের এ–সংক্রান্ত নির্দেশনায় বেআইনি কিছুই বলা হয়নি। ১৯৮৫ সাল থেকে বিভিন্ন সরকারি স্কুল–কলেজে ইউনিফর্ম চালু রয়েছে। কলেজ উন্নয়ন পর্ষদ (সিডিসি) ২০১৪ সালে এ নিয়ম চালু করেছে। তখন কোনো কলেজ এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে হঠাৎ করেই হিজাব পরে ক্লাস করার দাবি উঠল। এর জেরেই সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে হিজাব নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। শুধু বলা হয়েছে সমতা, সংহতি ও শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এমন পোশাক পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা যাবে না।
শুনানিতে আইনজীবী মোহাম্মদ তাহির আদালতকে বলেন, হিজাব পরতে বাধা দিয়ে কর্ণাটক সরকারের ওই আদেশ বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু বিভাগ একধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছে। আবার উর্দু কলেজে এ আদেশ জবরদস্তি বলবৎ করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম মেয়েদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। সরকারি আদেশ অনুযায়ী, শ্রেণিকক্ষে মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরতে পারবে না। অথচ তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণেও হিজাব পরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

এ সময় প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্তি এসব অভিযোগ লিখিত আকারে আদালতে জমা দিতে বলেন। তখন এজি প্রভুলিঙ্গ আদালতকে বলেন, অভিযোগের সত্যতা থাকলে রাজ্য সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে কর্ণাটক হাইকোর্টে আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানি হবে।

হিজাব পরার জন্য শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না—গত বছরের ডিসেম্বরে কর্ণাটক রাজ্যের উদুপি জেলায় সরকারি গার্লস পিইউ কলেজের ছয় শিক্ষার্থী এমন অভিযোগের পর মুসলিম ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ শুরু করেন। রাজ্যটিতে হিজাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল–কলেজ। এরপর তাঁরা কর্ণাটক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। এ মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। আদালতের আদেশে স্কুল খুললেও বিতর্ক কমেনি।

দক্ষিণ ভারতের বিজেপিশাসিত কর্ণাটক রাজ্যে হিজাব–বিতর্কের সূত্রপাত হলেও অন্যান্য রাজ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তেজনাও ছড়াচ্ছে। বিতর্ক ছড়িয়েছে পদুচেরি, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানসহ অন্যত্র। যুক্ত হয়েছেন শিক্ষিকারা। গতকাল পদত্যাগ করেছেন কর্ণাটকের একটি কলেজের ইংরেজির শিক্ষিকা চাঁদনি। তাঁর অভিযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে হিজাব পরে ক্লাস নিতে বাধা দিয়েছে। অথচ গত তিন বছর ধরে তিনি হিজাব পরেই ক্লাস নিচ্ছেন। এত দিন কেউ আপত্তি করেনি।