নিউজিল্যান্ডে দুটি মসজিদে নৃশংস হামলাকারী ব্রেনটন টারান্টের সাজার পর উল্লাস করেন হামলায় বেঁচে যাওয়া ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ মানুষ। গতকাল ক্রাইস্টচার্চ শহরে হাইকোর্টের সামনে
নিউজিল্যান্ডে দুটি মসজিদে নৃশংস হামলাকারী ব্রেনটন টারান্টের সাজার পর উল্লাস করেন হামলায় বেঁচে যাওয়া ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ মানুষ। গতকাল ক্রাইস্টচার্চ শহরে হাইকোর্টের সামনে

ক্রাইস্টচার্চ ট্র্যাজেডি

‘স্বস্তি ও ন্যায়বিচার পেয়েছি’

ব্রেনটন টারান্টের অপরাধের সাজা ঘোষণা হবে। তাই সকালেই আদালতের আশপাশে জড়ো হন স্বজন হারানো ব্যক্তিরা। ছিলেন সাধারণ মানুষও। চোখেমুখে তাঁদের চিন্তার ছাপ। কেউ কেউ রায় কী হবে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় ঘোষণা এল, টারান্টের আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে। তখন তাঁদের চোখেমুখে ছড়িয়ে পড়ে স্বস্তির আভা। অনেকেই নৃশংসতার সেই স্মৃতি স্মরণ করতেই বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়েন। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী টারান্টের রায় ঘিরে গতকাল বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ হাইকোর্টে ছিল এমন পরিস্থিতি।

২০১৯ সালের ১৫ মার্চ শুক্রবার। নিউজিল্যান্ডের অতি শান্ত ও সম্প্রীতির শহর ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদ আল নূর ও লিনউড ইসলামিক সেন্টারে মুসল্লিরা জুমার নামাজ আদায় করছিলেন। ওই সময় অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ৫১ জন।

টারান্টের এই অপকর্মের সাজা ঘোষণার দিনটি যে নিউজিল্যান্ড তথা মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য স্মরণীয়, তা একবাক্য স্বীকার করে নিতে হয়। ২৯ বছর বয়সী টারান্টকে প্যারোল ছাড়া আমৃত্যু সাজা দেন বিচারক, যা নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে এই প্রথম। রায় শোনার পর উপস্থিত লোকজন, হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য এবং হামলায় বেঁচে যাওয়া লোকেরা উল্লাস করতে করতে ক্রাইস্টচার্চ হাইকোর্ট ছাড়েন। আদালতের বাইরেও উল্লাস করতে দেখা যায় জড়ো হওয়া লোকজনকে। নিউজিল্যান্ডের জাতীয় সংগীত ‘গড ডিফেন্ড নিউজিল্যান্ড’ (স্রষ্টা নিউজিল্যান্ডকে রক্ষা করেন) বাজানো হয়। কেউ কেউ প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমরা সবাই এক’।

অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসের খবরে বলা হয়, লিনউড ইসলামিক সেন্টারে নামাজ পড়তে গিয়ে হামলায় আহত হন আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, এই রায় ন্যায়বিচারের প্রতীক। হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের টানা তিন দিন সাক্ষ্য নেওয়ার পর এই রায় ঘোষণা করেন বিচারক ক্যামেরুন ম্যানডার।

আল নূর মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে নিহত হন আবদেল ফাত্তাহ। তাঁর মেয়ে সারা কাশেম আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। রায়ের পর তিনি বলেন, এটা স্বস্তির ও ন্যায়বিচার। আদালতে উপস্থিত আল নূর মসজিদের ইমাম গামাল ফাওদা বলেন, ‘কোনো সাজাই হারিয়ে যাওয়া প্রিয় ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। তবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের প্রচেষ্টা আমাকে গর্বিত করেছে। আমরা সব সন্ত্রাসকে ঘৃণা জানাতেই আজ এখানে এসেছি।’

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন ছাড়াও রায়ের প্রশংসা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছে, এই রায় বিশ্বকে আরেকবার মনে করিয়ে দিল, সব অপকর্ম ও মতাদর্শগত ইসলামভীতি, বিদেশিভীতি, বর্ণবাদ ও ঘৃণার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে লড়াই করা প্রয়োজন।