মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেনকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা। গত শুক্রবার ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো জানান, সে দেশে আশ্রয় নিতে স্নোডেনকে প্রস্তাব দেওয়া হবে।
এদিকে লাতিন আমেরিকার অপর দেশ বলিভিয়াও স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়া বলেছে, ‘সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে’ স্নোডেনকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে তারা।
ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া ও নিকারাগুয়ার এমন অবস্থানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কোনো মন্তব্য করেনি। স্নোডেন গত শুক্রবার নতুন করে ছয়টি দেশে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন। এর আগে তিনি ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়াসহ ২১ দেশে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন। খবর বিবিসি, আল-জাজিরা ও রয়টার্সের।
প্রেসিডেন্ট মাদুরো বলেন, ‘ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আমি তরুণ স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্নোডেনকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর সাম্রাজ্যের যন্ত্রণাময় পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ ভেনেজুয়েলার ২০২তম স্বাধীনতা বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী কারাকাসে সামরিক বাহিনীর বিশেষ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের শুরুতে দেওয়া বক্তৃতায় মাদুরো এসব কথা বলেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘স্নোডেনের একমাত্র অপরাধ হলো, সত্য কথা বলা।’
নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট দানিয়েল ওর্তেগা বলেন, ‘নিকারাগুয়া একটি মুক্ত দেশ। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার অধিকারকে আমরা সম্মান জানাই। এটা স্পষ্ট যে সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে স্নোডেনকে আমরা সাদরে গ্রহণ করব।’ তিনি জানান, মস্কোয় নিকারাগুয়ার দূতাবাস স্নোডেনের আবেদনপত্র পেয়েছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বলিভিয়ার এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, গতকাল প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস স্নোডেনকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
তবে মাদুরো, ওর্তেগা ও মোরালেস—কেউই স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে কোনো শর্তের কথা উল্লেখ করেননি।
রুশ পার্লামেন্ট দুমার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির প্রধান অ্যালেস্কি পুশকভ বলেছেন, স্নোডেনকে ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক আশ্রয়দানের প্রস্তাব হচ্ছে সংকটের সর্বোত্তম সমাধান।
এদিকে বিশ্বব্যাপী মার্কিন সরকারের গোপন তথ্য ফাঁস করে আলোড়ন তোলা ওয়েবসাইট উইকিলিকস বলেছে, স্নোডেন গত শুক্রবার নতুন করে আরও ছয়টি দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। ‘যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে আশঙ্কায়’ ওই ছয়টি দেশের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
আইসল্যান্ডে স্নোডেনের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি আপাতত ঝুলে গেছে। গত শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্ট আসন্ন গ্রীষ্মের আগে স্নোডেনের বিষয়টি আলোচনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ওপর এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের ওপর মার্কিন প্রশাসনের গোপন নজরদারির কথা ফাঁস করে দেওয়ায় স্নোডেনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও সরকারি তথ্য চুরির মামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্নোডেন মামলার আগেই যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে হংকংয়ে যান। গত ২৩ জুন হংকং থেকে রাশিয়ার শেরেমেয়িতেভো বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। কিন্তু মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করায় এবং কোনো দেশ তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় না দেওয়ায় ওই বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকাতেই অবস্থান করতে হচ্ছে স্নোডেনকে।