বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লিতে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে পুলিশকেই। সুপ্রিম কোর্টের ওপর সেই দায়িত্ব চাপানো যাবে না। সোমবার এ কথা জানিয়ে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে।
কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লির বিভিন্ন সীমান্তে হাজার হাজার কৃষক পৌনে দুই মাস ধরে অবস্থান করছেন। তাঁদের এ অবস্থান পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। সরকারের সঙ্গে আন্দোলনরত কৃষকদের প্রতিনিধিদের ৯ দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু অচলাবস্থা কাটেনি। সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কৃষকেরা দিল্লিতে ট্রাক্টর মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের বার্ষিক প্যারেড বানচাল করার কোনো উদ্দেশ্য তাঁদের নেই। কৃষক নেতারা বলেছেন, তাঁদের মিছিল হবে দিল্লিকে ঘিরে থাকা আউটার রিং রোডে। প্রতিটি ট্রাক্টরে উড়বে জাতীয় পতাকা।
কৃষকদের এই কর্মসূচিতে প্রমাদ গুনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লি পুলিশ মারফত এক আবেদনে সরকারের আরজি, সুপ্রিম কোর্ট ওই র্যালির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুন। কারণ হিসেবে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দাখিল করে বলা হয়, দেশবিরোধী কিছু শক্তি ওই মিছিলের সুযোগ নিয়ে গোলমাল পাকানোর ছক কষছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। দেশের জন্যও তা হবে অস্বস্তিকর ও সম্মান হানিকর।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন এজলাসে মামলাটির শুনানি হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল বলেন, ট্রাক্টর মিছিলকে কেন্দ্র করে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অতএব আদালত রায় দিন। প্রধান বিচারপতি সেই আরজি মানতে অস্বীকার করে বলেন, দিল্লি পুলিশকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা মিছিল করতে দেবে কি না, দিলেও কতজনকে অনুমতি দেওয়া হবে, তা ঠিক করার পূর্ণ অধিকার দিল্লি পুলিশের রয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, দিল্লি পুলিশের কী অধিকার, কীভাবে তারা তা প্রয়োগ করবে, সে কথা মনে করিয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট তাই প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেবে না।
ট্রাক্টর মিছিল কেমন হবে, তার মহড়াও কৃষকনেতারা কিছুদিন আগে করেছেন। তা ছিল শান্তিপূর্ণ। তাঁরা জানিয়েছেন, কৃষকদের নিয়ে কয়েক হাজার ট্রাক্টর প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন দিল্লির আউটার রিং রোডে ঘুরবে। এ জন্য দিল্লি, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ পুলিশের সহায়তাও তাঁরা চেয়েছেন। কৃষকনেতারা বলেছেন, কোনোভাবেই তাঁরা প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে বাধা সৃষ্টি করবেন না।
বেশ কয়েকজন কৃষকনেতার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনায় কৃষক নেতারা সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) অনেক নেতার বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে। কৃষকনেতাদের অভিযোগ, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে সরকার কৃষক ঐক্যে ফাটল ধরাতে চাইছে। অকালি দল, কংগ্রেস, বামপন্থীসহ বিরোধী দলের নেতারা এ জন্য সরকারের সমালোচনা করেছে।