কানাডার সরকারি কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫০টি সাইবার হামলা হয়, যেখানে অন্য কোনো দেশের মদদ থাকে। এর মধ্যে অন্তত একটি হামলা সফল হয়। সাইবার হামলা রোধে দেশটির গোপন সংস্থা কমিউনিকেশনস সিকিউরিটি এসটাবলিশমেন্ট (সিএসই) এ তথ্য জানিয়েছে। বিদেশি কোনো সরকারের যোগসাজশে কোনো একটি দেশে এত বেশি সংখ্যক সাইবার হামলার ঘটনা এক কথায় বিরল।
সিএসইর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে আড়াই হাজারের বেশি সাইবার হামলার ঘটনা শনাক্ত করেছে কানাডা সরকার। ২০১৩ সালে হওয়া হামলাগুলোর মধ্যে ৬ শতাংশের বেশি সফল হয়েছিল। ২০১৫ সালে এসে এটি অনেকটা কমে আসে। ওই বছর হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ২ শতাংশ সফল হয়েছে।
এসব হামলার পেছনে বিভিন্ন দেশের সরকারের মদদ রয়েছে বলে জানালেও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো দেশের কথা জানায়নি সিএসই। যদিও ২০১৪ সালে কানাডার জাতীয় গবেষণা পরিষদে একটি বড় ধরনের হামলার মূল কুশীলব হিসেবে চীনের নাম উঠে এসেছিল। ওই হামলার কারণে পরিষদের কম্পিউটার ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখতে হয়েছিল। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কানাডা সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছিল কয়েক লাখ ডলার। সাইবার যুদ্ধের দুনিয়ায় এ ছাড়া রাশিয়া, ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়া বেশ পরিচিত নাম। যদিও এ দেশগুলোর কোনোটির কথাই আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি কানাডার কর্মকর্তারা।
এদিকে কানাডার জননিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছে, কানাডার সরকারি কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রতিদিনই অজস্র ছোটখাটো সাইবার হামলা হয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০ লাখ হামলা নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে এসব হামলা সাধারণত ছোটখাটো হ্যাকাররা করে থাকে, যারা কোনো দেশের সরকারের সঙ্গে যুক্ত নয়।
কিছুদিন আগে প্রকাশ করা আরেক প্রতিবেদনে সিএসই জানায়, কানাডার গণতান্ত্রিক কাঠামো সাইবার হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষত ২০১৯ সালের ফেডারেল নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের হামলার জোর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে সিএসই জানায়, বছরের প্রথম নয় মাসে কানাডার ফেডারেল সিস্টেমে মোট ৪ হাজার ৫৭১টি সাইবার হামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার হামলাই হয়েছিল প্রাকৃতিক সম্পদ, বিদ্যুৎ ও পরিবেশ সম্পর্কিত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে। এসব হামলার মধ্যে তিনটি হামলা সফল হয়, যা কোনো গোপনীয় তথ্য চুরি করতে পারেনি। এসব হামলার পেছনে কোনো দেশের সরকারের হাত রয়েছে কিনা, তা সে সময় নিশ্চিত হতে পারেনি সিএসই।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুদ্ধিবৃত্তিক যেকোনো সম্পদ সাইবার চুরির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া বা এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে সহায়তা না করার বিষয়ে গত জুনে কানাডা ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। বিশেষত বেসরকারি খাতের ব্যবসায়িক তথ্য ও বাণিজ্য খাতের গোপনীয় বিষয়গুলো এর মাধ্যমে সুরক্ষার আওতায় এসেছে। কিন্তু সরকারি নেটওয়ার্কের সুরক্ষার বিষয়টি এ চুক্তিতেও অনুল্লিখিত থেকে গেছে। ফলে কানাডার সরকার ও ফেডারেল সরকারগুলোর মধ্যে হওয়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ অরক্ষিত রয়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।