রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে সংকুচিত আকারে সংঘর্ষের সময় যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ওই প্রস্তাব অনুমোদনের আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌন নিপীড়নে ভুক্তভোগীদের সঠিক বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানান নোবেলজয়ী নারী নাদিয়া মুরাদ, ডেনিস মুকওয়েজি ও মানবাধিকার আইনজীবী অমল ক্লুনি। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
২০১৮ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইরাকের কুর্দি মানবাধিকারকর্মী নাদিয়া মুরাদ ও কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনিস মুকওয়েজি সংঘর্ষকবলিত এলাকায় যৌন সহিংসতার ভুক্তভোগীদের সঠিক বিচারের জন্য আহ্বান জানান।
ভোটের আগে মুরাদ বলেন, ‘যৌন দাসত্ব করানোর কারণে একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়নি। একটি প্রজন্মের পুরো আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আমরা জাতিসংঘে ভাষণ দিচ্ছি, কিন্তু বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বা কোনো কিছু করা হয়নি।’
মুকওয়েজি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নির্যাতনের শিকার মানুষকে বিচার দেওয়ার ক্ষেত্রে কিসের জন্য অপেক্ষা করছে? সংঘর্ষ এলাকায় যৌন নিপীড়কদের বিচার করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালত স্থাপনের আহ্বান জানান তিনি।
মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী অমল ক্লুনি দুর্বল আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার নিন্দা জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে এ ধরনের নিপীড়কদের বিচারে বাধার জন্য অভিযুক্ত করেন।
ক্লুনি বলেন, ‘আমরা যদি এখন পদক্ষেপ না নিই, তবে দেরি হয়ে যাবে। আমি মানছি আমরা যৌন সহিংসতার মহামারির মুখে রয়েছি। আমি মনে করি, বিচার হলে এটি কমানো যাবে।’
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যৌন সহিংসতা কমাতে জার্মানির খসড়া করা একটি রেজল্যুশনের অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আলোচনার পর নিরাপত্তা পরিষদে ১৩ ভোটে ওই খসড়া প্রস্তাব পাস হয়। চীন ও রাশিয়া এতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
ওই দুটি দেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংঘর্ষ এলাকায় যৌন সহিংসতার বিরোধী তারা। কিন্তু খসড়ায় ব্যাখ্যা শিথিল করা হয়েছে। এ খসড়ায় প্রজনন অধিকারসংশ্লিষ্ট বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার হুমকির সমালোচনা করে ফ্রান্স।
জার্মানির ওই খসড়ায় একটি আনুষ্ঠানিক ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি যৌন নিপীড়কদের ধরতে একটি পদ্ধতি ঠিক করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া ভুক্তভোগীকে সুরক্ষার পাশাপাশি তাঁদের যৌন ও প্রজনন অধিকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির ব্যবস্থার কথাও বলা হয়। চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এর বিরোধিতা করে। ওয়ার্কিং গ্রুপের কথা বাতিল করা হয় এবং প্রজনন অধিকারের বিষয়টি নিয়ে ভেটো দেওয়ার হুমকি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ওই সিদ্ধান্ত বিষয়ে একজন কূটনীতিবিদ বলেছেন, ওই রেজল্যুশন এখন এতটা কাটছাঁট করা হয়েছে, এটা এখন অপর্যাপ্ত ও এতে আর তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই।
আরেক কূটনীতিবিদ বলেন, আমেরিকানরা তাদের নিজস্ব তত্ত্বের ভিত্তিকে দর-কষাকষি করে একে জিম্মি করে নিজ সুবিধা আদায় করেছে, যা কলঙ্কজনক।