শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে তাঁকে শপথ পড়িয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ষষ্ঠবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য অনেক নেতার মতোই রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তাঁর চাচা জুনিস জয়াবর্ধনে এক দশকের বেশি সময় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে রাজনীতিতে আসেন তিনি। ১৯৭৭ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন জুনিস জয়াবর্ধনে। ওই সরকারেই সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হন তিনি।
তামিল গেরিলাদের হাতে সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা নিহত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে প্রথমবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হন বিক্রমাসিংহে। সেবার মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হন বিক্রমাসিংহে। সে সময় তাঁর বাল্যবন্ধু দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অর্জুনা মাহেন্দ্রানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি ডলার অনিয়মের ঘটনা প্রকাশিত হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, এর আগে পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হলেও কোনোবারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি রনিল বিক্রমাসিংহে। চলতি সপ্তাহ শুরু হওয়ার আগেও মনে করা হচ্ছিল, ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদের ক্যারিয়ার শেষ পর্যায়ে। তবে এর পরেই তিনি একটি ঐকমত্যের প্রশাসন পরিচালনা করতে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপদেশটিকে পঙ্গু অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে সম্মত হন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ষষ্ঠবারের মতো রনিলের শপথ নেওয়াকে ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছেন তামিল আইনপ্রণেতা ধর্মলিঙ্গম সিথাধান। তিনি বলেন, ‘এটা প্রমাণ করে কতটা মরিয়া পরিস্থিতিতে আমাদের দেশ রয়েছে।’
রনিল বিক্রমাসিংহকে পশ্চিমাপন্থী বাজার সংস্কারবাদী হিসেবে মনে করা হয়। অর্থনৈতিক সংকটে ডুবতে বসা শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সহায়তা (বেল আউট তহবিল) এনে দিতে সম্ভাব্য আলোচক হিসেবেও মনে করা হচ্ছিল।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই আর্থিক ও মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন আনতে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছিলেন বিক্রমাসিংহে।
ইউএনপির জাতীয় সংগঠক সাগালা রত্নায়াকা আল–জাজিরাকে বলেন, ‘যখন অন্য কোনো সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী হতে রাজি হননি, তখন রনিল এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। শ্রীলঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য এটি একটি ভয়ংকর সময়। তাঁর জন্য সবচেয়ে কঠিন সময় আসছে।’
বর্তমান পার্লামেন্টে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) একমাত্র প্রতিনিধি রনিল বিক্রমাসিংহে। যদিও তাঁর দল রাজনীতি একসময় বেশ শক্তিশালী ছিল। কিন্তু গত নির্বাচনে দলটির ভরাডুবি হয়।
সাবেক আইনজীবী রনিল বিক্রমাসিংহে একসময় সাংবাদিকও হতে চেয়ছিলেন। এএফপিকে তিনি বলেছিলেন, ১৯৭৩ সালে সংবাদপত্রের পারিবারিক ব্যবসাকে জাতীয়করণ করা না হলে সম্ভবত তিনি সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতেন।
রনিল বিক্রমাসিংহে গত দুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করে হেরে গেছেন। দলেক টানা পরাজয় উপহার দেওয়ায় খোদ সমর্থকেরাও তাঁকে ‘রেকর্ড লুজার’ বলে আখ্যা দেন।
পাঁচ হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের দায়ে ঋণখেলাপি একটি দেশের দায়িত্ব নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। দেশটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির মতো অর্থও নেই। যদিও অর্থনীতি সংস্কারে তাঁর সুনাম আছে। তবে এবার তিনি নিজেই সতর্ক করে বলেছেন যে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট দ্রুত সমাধান হবে না।
গত সপ্তাহে তিনি পার্লামেন্টে বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আসতে এখনো বাকি।’