আম আদমি পার্টির (এএপি) ধরনার দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার দাবি আংশিক পূরণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এএপি সরকারের নির্দেশ অমান্যকারী দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সরকারের এ ঘোষণার পর এএপি তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে।
এর আগে সকাল থেকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পুলিশের সঙ্গে এএপি-সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষের কয়েকজন আহত হন।
আদেশ অমান্য করায় দিল্লির পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে এএপি গত সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে ধরনা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। তবে সোমবারই রেল ভবনের তাদের পুলিশ আটকে দিলে তারা পাশের পার্কে অবস্থান নেয়। সোমবার রাত তারা পার্কেই কাটায়। শুধু কেজরিওয়াল নন, তাঁর পুরো মন্ত্রিসভা এখন রাজপথে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এখনো রাজি হয়নি। দাবি না মানলে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন কেজরিওয়াল। এমনকি পুলিশের অনুরোধ মেনে ধরনা মঞ্চকে রেল ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে যন্তর-মন্তরে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি এএপি নেতৃত্ব। এ করণে চার দিন পর ২৬ জানুয়ারি কীভাবে প্রজাতন্ত্র দিবসের ঐতিহ্যবাহী প্যারেড অনুষ্ঠান করা হবে, সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রের বড় চিন্তা।
সরকারের চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়ে কেজরিওয়াল ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি মানা না হলে লক্ষাধিক সমর্থক এনে প্যারেড বন্ধ করে দেবেন তাঁরা।
এএপি নেতৃত্ব হঠাত্ কেন এমন কেন্দ্রবিরোধী আন্দোলন শুরু করল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই বা কেন দাবি মেনে দিল্লি পুলিশের পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করতে রাজি হচ্ছে না, তা বোঝা যাচ্ছে না। কেজরিওয়াল জানতে চেয়েছেন, মাস কয়েক আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কারণে পুলিশের ১২ জন কর্মীকে যদি কর্তব্যে অবহেলার জন্য বরখাস্ত করা যায়, তাহলে এখন কেন করা যাবে না। তাঁরাও তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত?
সোমবার সারা রাত কেজরিওয়ালসহ রাজ্য মন্ত্রিসভার সব সদস্যই রেল ভবনের সামনে ছোট পার্কে ও তার সামনের রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে কাটান। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ও বৃষ্টি ধরনা ব্যাহত করতে পারেনি। বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। ওই এলাকার চারটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অফিসযাত্রীদের ভোগান্তির একশেষ।
গতকাল সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে এএপি-সমর্থকেরা আসতে থাকেন। বিজেপির কয়েক শ সদস্যও এএপির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে ওই এলাকার দিকে এগোতে থাকেন। এ কারণে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বেলা দুটার দিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। একদল সমর্থক পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। সেই সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকটি ইট ছোড়া হয়। এর পরই পুলিশ এএপি-সমর্থকদের লাঠিপেটা শুরু করে।
এ অবস্থায় প্রজাতন্ত্র দিবস নির্বিঘ্নে পালিত হবে কি না, সেটা নিয়ে চিন্তায় পড়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। প্যারেডের সবকিছু তৈরি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবার প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি। এখন এএপির কর্মসূচি প্রত্যাহার হওয়ায় সরকার কিছুটা স্বস্তি পেল।