রক্তাক্ত মিয়ানমারের রাজপথ, গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৪

সেনা–পুলিশের হামলা থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছেন বিক্ষোভকারীরা। ২৭ মার্চ, ইয়াঙ্গুন শহরে
ছবি: রয়টার্স।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ভয়াল হয়ে উঠল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আজ শনিবার রাজধানী নেপিডোতে সেনা কুচকাওয়াজের পরপরই সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে চরম দমনপীড়ন চালানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দেশটিতে একদিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১১৪ জনে দাঁড়িয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আজকের দিনটি বেশ রক্তক্ষয়ী হতে পারে, এমন আশঙ্কা আগে থেকেই করা হচ্ছিল। কেননা, গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক সতর্কবার্তায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘আপনাদের এর আগের মৃত্যুগুলো থেকে শেখা উচিত যে আপনারা মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো বিপদে পড়তে পারেন।’

অবশ্য এ সতর্কবার্তায় এটি উল্লেখ করা হয়নি, বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে গুলি করে হত্যার নির্দেশনা আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয়েছে কি না। তবে সেই সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করেই আজ রাস্তায় নামেন বিক্ষোভকারীরা।

মাথায় গুলি করার জান্তার হুমকি উপেক্ষা করে আজ সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন। ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে শুরু হয় প্রচণ্ড বিক্ষোভ। অন্যান্য দিনের মতো রাজপথে ছিল জান্তা সরকারের সেনা–পুলিশও। তবে আজ তারা আরও কঠোর অবস্থান নেয়।

স্থানীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ–এর খবরে বলা হয়েছে, শনিবার দেশজুড়ে সেনা–পুলিশের গুলিতে অন্তত ১১৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মান্দালয় শহরে শিশুসহ অন্তত ৪০ জন ও ইয়াঙ্গুনে ২৭ জন নিহত হন।

দালা নামক উপশহরে স্থানীয় থানার কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন চারজন। এখানে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। ইনসেইন শহরে গুলিতে নিহত হন তিনজন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন মিয়ানমারের অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে।

মধ্যাঞ্চলীয় মিংগিয়ান শহরে গুলিতে মারা গেছেন অন্তত দুই বিক্ষোভকারী। এখানে বিক্ষোভে অংশ নেন থু ইয়া জাউ। তিনি বলেন, ‘তারা (জান্তা) পাখির মতো নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে। তবে আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব। জান্তা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলবে।’

প্রায় দুই মাস ধরে চলা জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে আজকের ১১৪ জনসহ চার শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হলেন। এই সময়ে আটক হয়েছেন প্রায় তিন হাজার। জান্তাবিরোধী আইনপ্রণেতাদের সংগঠন সিআরপিএইচের মুখপাত্র সাসা বলেছেন, আজকের দিনটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন্য লজ্জার।

এদিকে ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা কারেনদের সশস্ত্র সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন দাবি করেছে, থাইল্যান্ডের সীমান্ত–সংলগ্ন এলাকায় একটি সেনাচৌকিতে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করেছে তারা। এ সেনাসদস্যদের মধ্যে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন।

এই হামলায় সংগঠনটির একজন সদস্যও নিহত হন। তবে এই হামলার বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে জান্তা প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি।

এই হামলার পর মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে কারেন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় একটি গ্রামে বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের একটি নাগরিক সংগঠন।