মেয়ে বেসবল খেলতে পছন্দ করেন। মারও খেলাটা পছন্দ। চাইলেন মেয়েকে কোনো বেসবল দলে ভিড়িয়ে দেবেন। নামলেন এমন কোনো বেসবল দলের খোঁজে। কিন্তু খুঁজতে নেমে বিহ্বল দশা মায়ের। কারণ জানতে পারলেন, মেয়েদের জন্য কোনো বেসবল দল নেই। রোখ চেপে গেল তাঁর। মেয়ে যাতে খেলতে পারে সে জন্য মা শেষ পর্যন্ত মেয়েদের জন্য একটি বেসবল লিগই চালু করে দিলেন। লিগটির নাম দিলেন টরন্টো গার্লস বেসবল। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই লিগের জন্ম ডানা বুকম্যানের হাত ধরে।
ডানা বুকম্যান এমন একজন নারী, যিনি সেখানেই পান সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার দেখা, যেখানে অন্যরা হাল ছেড়ে দিতে অভ্যস্ত। তাঁর মেয়ে নোয়া রাই ও’নিল বেসবল খেলতে পছন্দ করত। তখন ২০১৬ সাল। সে সময়ে নোয়া স্থানীয় বেসবল লিগে নাম লেখাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। তার সঙ্গে চার শতাধিক বন্ধু লিগে ঠিকই নাম লেখায়। কিন্তু তীব্র আগ্রহ থাকার পরও নোয়া বাদ পড়ে শুধু মেয়ে হওয়ার কারণেই। ডানা এ অবস্থায় অন্য মায়েদের মতোই বলতে পারতেন, ‘মা, অন্য কোনো খেলা বেছে নাও। বেসবল ছেলেদের খেলা।’
কিন্তু এভাবে হাল ছাড়াটা ডানা বুকম্যানের ধাতে নেই। আবার বেসবল সম্পর্কে তেমন ভালো ধারণাও নেই তাঁর। দুই সন্তান বেসবল খেলতে শুরু করার পরই এই খেলাটির সঙ্গে তাঁর চিন-পরিচয়। কিন্তু তিনি হাল ছাড়লেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি পোস্ট দিলেন, ‘বেসবল খেলতে ইচ্ছুক আরও চার-পাঁচটি মেয়ের খোঁজে, সঙ্গে চাই একজন কোচও’, যাতে সবাই মিলে বেসবলটা ভালোভাবে চর্চা করতে পারে। পরে তিনি বেসবলে আগ্রহী ১০ জন মেয়ের খোঁজে ফেসবুকেই বিজ্ঞাপন দেন, উদ্দেশ্য ছোট পরিসরে খেলা। তাঁর এই বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতটাই দ্রুত যে, তা ডানার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আসতে থাকে আগ্রহীদের অনুরোধ। গত জুন পর্যন্ত টরন্টো গার্লস বেসবলে ৪০ জনের বেশি মেয়ে অংশ নিয়েছে। গত আগস্টে ডানা বুকম্যান তাঁর চালু করা মেয়েদের ফুটবল লিগের তৃতীয় মৌসমটি শেষ করলেন। এই গ্রীষ্মে লিগটির পরিসর হ্যালিফিক্স ও উইনিপেগ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। আর সদস্য সংখ্যা এরই মধ্যে ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে।
টরন্টো স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডানা বুকম্যান ছিলেন সিবিসি চ্যানেলের প্রযোজক। বর্তমানে ছুটিতে থাকা এই প্রযোজক কখনো ভাবেননি তিনি কখনো একটি বেসবল লিগের নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু এখন তাই হচ্ছে। কারণ তিনি সমস্যা থেকে না পালিয়ে, তাকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে জানেন। আর এই ক্ষমতার কারণেই তিনি হয়ে উঠেছেন এক দারুণ সংগঠক। ডানা বুকম্যানের উদ্যোগের কারণে এখন বেসবলে আগ্রহী মেয়েদের জন্য সম্ভাবনার দরজা খুলে গেছে। এত দিন টরন্টোয় পুরুষের খেলা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসা বেসবলে মেয়েদের সম্ভাবনা যে অনেক বড়, তা ডানার হাত ধরেই উন্মোচিত হয়েছে। তাঁর কারণেই এখন কানাডার মেয়েরা খেলাটির প্রতি বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
নিজের কাজের বিষয়ে স্টারকে ডানা বুকম্যান বলেন, ‘নোয়ার খেলা প্রায় বন্ধ হতে চলেছিল। বেসবল সে খুব ভালোবাসত। এটা তার আত্মবিশ্বাসের উৎস ছিল। কিন্তু এই খেলাটি থেকে তাকে দূরে সরে যেতে হচ্ছিল। সে যে খেলাই পছন্দ করত, আমি তার জন্যই লড়তাম। এ ক্ষেত্রে খেলাটি বেসবল। আর তার পথ রুদ্ধ হয়েছিল। তাই লড়াই করতেই হলো।’
বেসবলে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা ডানা বুকম্যান গত বছর অনেক বাঘা বাঘা কোচ ও সংগঠককে পেছনে ফেলে কানাডার বেসবল নেটওয়ার্কের তালিকায় ঢুকে পড়েন। আর চলতি বছর ডানা বুকম্যানকে আরবিসি উইম্যান অব ইনফ্লুয়েন্স ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর প্রকল্পের বিস্তৃতির কারণে প্রথাগত বেসবল সংগঠকেরা এখন স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, ‘মেয়েদের বেসবলে যথেষ্ট আগ্রহ ও দক্ষতা রয়েছে। তাদের জন্য একটি লিগ থাকাটা জরুরি।’