বয়স্ক লোকজনের বেলায়ও ভালো ফল দেখা গেছে মডার্নার করোনাভাইরাসের টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মডার্না বয়স্ক লোকজনের ওপর করা তাদের ছোট একটি পরীক্ষার ফল গতকাল বুধবার প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, করোনার টিকাটি প্রাথমিক পরীক্ষায় অল্পবয়সী তরুণদের মতো ৫৬ বছর বয়সী ব্যক্তিদের বেলায়ও সমসংখ্যক অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে।
বুধবার ফোর্বস অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বয়স বিবেচনায় করোনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয় ৫০ পার হওয়া লোকজনকে। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, করোনার টিকা বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় যথেষ্ট সুরক্ষা দিতে পারবে না। কিন্তু মডার্নার টিকা তাঁদের ক্ষেত্রেও আশাব্যঞ্জক ফল দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য অনুযায়ী, কমবয়সী মানুষের তুলনায় বয়স্ক লোকজনের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুঝুঁকি বেশি। কারণ, তাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বয়সের সঙ্গে সাধারণভাবে দুর্বল হয়ে যায়। তাই কোনো টিকা তাঁদের শরীরে কার্যকর হওয়া কঠিন।
মডার্না ৫৬ থেকে ৭০ বছর বয়সী ১০ জন এবং ৭১ ও এর বেশি বয়সী ১০ জন ব্যক্তিকে নিয়ে টিকার পরীক্ষা করেছে। এতে দেখা গেছে, বয়স্ক ব্যক্তিদের শরীরে তরুণদের সমপরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
গত জুলাইয়ে মডার্নার পক্ষ থেকে টিকা পরীক্ষার ফল জানিয়ে বলা হয়, তাঁদের টিকা ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। টিকাটি নিরাপদ ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ওই সময় বয়স্ক আরও মানুষের শরীরেও টিকাটির পরীক্ষা করার কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
মডার্না ৫৬ থেকে ৭০ বছর বয়সী ১০ জন এবং ৭১ ও এর বেশি বয়সী ১০ জন ব্যক্তিকে নিয়ে টিকার পরীক্ষা করেছে। এতে দেখা গেছে, বয়স্ক ব্যক্তিদের শরীরে তরুণদের সমপরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া এতে মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এটি সহনশীল। মডার্নার প্রকাশিত এ তথ্য অবশ্য কোনো পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশ হয়নি। তবে তাঁরা এই তথ্য বিশেষজ্ঞদের সামনে তুলে ধরেছে।
এ মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ কোটি ডোজ মডার্নার টিকা ১৫০ কোটি মার্কিন ডলারে কেনার ঘোষণা দেন। মডার্নার টিকাটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত টিকা খোঁজার কার্যক্রম ‘অপারেশন র্যাপ স্পিড’ কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই অন্তত একটি কার্যকর টিকা পেতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। কার্যকর কোনো টিকা অনুমোদন পেলেই তার প্রথম চালান নিয়ে নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
মডার্নার সঙ্গে চুক্তির মতোই আরও কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসন, ফাইজার, নোভাভ্যাক্স, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ও সানোফি। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে মডার্নার টিকা গবেষণা ও দ্রুত তৈরিতে ৯৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে।
ফোর্বসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আগামী বছরের প্রথম দিকে কোনো টিকা নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণ হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগবিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি বলেছেন, ২০২১ সালের কয়েক মাস না যাওয়া পর্যন্ত সবার জন্য টিকা সহজলভ্য হওয়ার আশা করছেন না তিনি।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মডার্নার টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। মডার্নার ভ্যাকসিন মূলত ম্যাসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) ভিত্তিক, যা ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান বহন করে এবং শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থাকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে শেখায়। যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন তৈরিতে সম্ভাব্য অগ্রগতির ঘোষণা এসেছে মডার্নার প্রথম ধাপের পরীক্ষার ইতিবাচক ফল দেখে। মডার্নার প্রথম ধাপের পরীক্ষায় ৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবীর সবার শরীরেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দেখা গেছে।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিফেন ব্যানসেলের মোট সম্পদের পরিমাণ ২১০ কোটি মার্কিন ডলার। গত এপ্রিলে মডার্নার শেয়ারের দাম বেড়ে গেলে কোটিপতিদের তালিকায় উঠে আসেন ব্যানসেল। মডার্নার টিকার প্রথম ধাপের ইতিবাচক ফলাফলের পর দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার ঘোষণা দিলে তাদের শেয়ারের দাম বেড়ে যায়।