যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন বরিস জনসন। আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত দলীয় আইনপ্রণেতাদের প্রথম দফা ভোটে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনসন পেয়েছেন ১১৪ ভোট। মাত্র ৪৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। তৃতীয় স্থান অধিকার করা পরিবেশ-বিষয়কমন্ত্রী মাইকেল গোভ পেয়েছেন ৩৭ ভোট।
কনজারভেটিভ দলের নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে দলটির ৩১৩ জন আইনপ্রণেতারা ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রার্থী সংখ্যা দুইয়ে নামিয়ে আনবেন। তারপর দলের এক লাখ ৬০ হাজার তৃণমূল সদস্যের ভোটে ওই দুজন থেকে একজন নেতা নির্বাচিত হবেন। গতকাল বুধবার প্রার্থীরা আইনপ্রণেতাদের প্রথম দফা ভোটের মুখোমুখি হন।
ব্রেক্সিট নিয়ে গৃহবিবাদের জের ধরে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। যে কারণে নতুন নেতার খোঁজে নেমেছে দলটি। নিয়ম অনুযায়ী নতুন নেতাই হবেন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। জুলাই মাসের শেষের দিকে নতুন নেতা চূড়ান্ত হবে। তখন থেরেসা মে সেই নেতার কাছে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে বিদায় নেবেন। মোট ১০ জন প্রার্থী থেরেসা মে’র উত্তরসূরি হওয়ার লড়াইয়ে নামেন।
প্রথম দফা ভোটাভুটিতেই বাদ পড়েছেন এস্টার ম্যাকভি (৯ ভোট), মার্ক হারপার (১০ ভোট) ও অ্যান্ড্রিয়া লিডসম (১১ ভোট)। তাঁরা প্রথম ধাপ উত্তীর্ণ হতে প্রয়োজনীয় কমপক্ষে ১৭ ভোট পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক ব্রেক্সিট-বিষয়ক মন্ত্রী ডোমিনিক রাব ২৭, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ২৩, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক ২০ ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন-বিষয়ক মন্ত্রী রোরি স্টুয়ার্ট ১৯ ভোট পেয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে আছেন। ১৯ জুন হবে দ্বিতীয় দফা ভোটাভুটি। তার আগে টিকে থাকা প্রার্থীদের ১৮ জুন বিবিসি ওয়ানে সরাসরি বিতর্কে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
আইনপ্রণেতাদের ভোটাভুটিতে প্রতি ধাপে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থী প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েন। তবে এবার প্রার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন করতে সম্প্রতি দলটি কিছু প্রক্রিয়াগত পরিবর্তন আনে। পরিবর্তিত নিয়ম অনুযায়ী, আইনপ্রণেতাদের ভোটাভুটিতে প্রথম ধাপ উত্তীর্ণ হতে কমপক্ষে ১৭ ভোট পেতে হবে। আর দ্বিতীয় ধাপ অতিক্রম করতে লাগবে ৩২ দলীয় আইনপ্রণেতার সমর্থন। ফলে এবার কেবল সবচেয়ে কম ভোট নয়, প্রথম দুই ধাপে নির্ধারিত ভোটের কম পেলেই ছিটকে পড়ছেন প্রার্থীরা।
এদিকে প্রার্থীদের অনেকেই বলেছেন যে, তাঁরা ব্রেক্সিটের সময় আর পেছাতে রাজি নন। প্রধানমন্ত্রী হলে প্রয়োজনে চুক্তি ছাড়াই আগামী ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর করবেন। যে কারণে চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ ঠেকাতে আগাম তোড়জোড় শুরু করেছে বিরোধী দলগুলো। এর আগে প্রধান বিরোধী দল লেবার চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ ঠেকাতে সংসদে একটি সর্বদলীয় প্রস্তাব তোলে। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে আগামী ২৫ জুন সংসদের কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছিল তারা। যাতে সংসদে বিল উত্থাপনের মাধ্যমে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ ঠেকাতে সরকারকে বাধ্য করা যায়। কিন্তু ৪১ ভোটের ব্যবধানে লেবার দলের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এটি সম্ভাব্য নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য ভালো খবর।
সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার পার্লামেন্টের কার্যবিধি নিয়ন্ত্রণ করে এবং আইন প্রণয়নের জন্য বিল উত্থাপন করে। বিরোধীরা কেবল তাতে সংশোধনী প্রস্তাব আনতে পারে। পার্লামেন্টের কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে বিরোধীরা নিজেদের পছন্দমতো বিল উত্থাপন করতে পারত।