যুক্তরাজ্য চাইলে ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে থেকে যেতে পারবে। এ জন্য ইইউর অন্য সদস্যদেশগুলোর মতামতের প্রয়োজন পড়বে না। এমনকি যুক্তরাজ্যের সদস্যপদের বিদ্যমান শর্তেরও কোনো নড়চড় হবে না। আজ সোমবার ইইউর শীর্ষ আদালত ‘ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস’ (ইসিজে) এমন রায় দিয়েছেন। ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ইইউ আদালতের এই রায় যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদবিরোধীদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে দিল।
ইইউর সঙ্গে সম্পাদিত বিচ্ছেদ চুক্তি কার্যকর হবে কি হবে না—এমন প্রশ্নে আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। তবে হুট করেই এই ভোটাভুটি স্থগিত করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।
ইইউর অন্য সদস্যদেশগুলোর অনুমতি না নিয়ে যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারবে কি না, এ বিষয়ে ইসিজের রুলিং (মতামত) চেয়েছিল যুক্তরাজ্যের একদল ব্রেক্সিটবিরোধী রাজনীতিক। যুক্তরাজ্য সরকার ও ইইউ কর্তৃপক্ষ—উভয়েই এই রুলিংয়ের বিরোধিতা করে। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রধান আইনজীবী হিউবার্ট লিগ্যাল যুক্তি দেন, সদস্যদেশগুলোর মতামত ছাড়াই ব্রেক্সিট বাতিলের পক্ষে রায় খারাপ নজির তৈরি করবে। এর ফলে সদস্যদেশগুলো বাড়তি সুবিধা আদায়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে আবার সেটি বাতিলের কৌশল নেবে। আর যুক্তরাজ্য সরকারের আইনজীবী বলেন, ব্রেক্সিট সিদ্ধান্ত বাতিলের কোনো ইচ্ছা যুক্তরাজ্যের নেই। ফলে ইসিজের উচিত কাল্পনিক এই বিষয়ে রুলিংয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা। সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এমন রুলিং চাওয়া হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে ইসিজে অ্যাডভোকেট জেনারেলের মতামত ছিল, যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ইইউর সঙ্গে থেকে যেতে পারে। সোমবার ইসিজের চূড়ান্ত রায়ে অ্যাডভোকেট জেনারেলের মতামতের প্রতিফলনই ঘটল। ইসিজে বলেছে, বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক আবেদন বা ‘আর্টিকেল ৫০’ সক্রিয় করার দুই বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে। অথবা বিচ্ছেদ চুক্তি চূড়ান্ত করার আগ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে অন্য সদস্যদেশগুলোর মতামতের প্রয়োজন হওয়া উচিত নয়। তবে গণতান্ত্রিক পন্থায় অর্থাৎ সংসদের অনুমোদন নিয়ে সিদ্ধান্ত বাতিলের কাজটি করতে হবে। বাতিলের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউকে জানালেই সদস্যপদ চলমান থাকবে।
ইসিজে বলেছেন, থেরেসা মের বিচ্ছেদ চুক্তির ওপর ভোটাভুটির আগে এমপিদের সামনে বিকল্পগুলো পরিষ্কার করার জন্য এই রুলিং তাঁরা দিয়েছেন।
ইসিজের মতামত চাওয়া বিচ্ছেদবিরোধী ব্রিটিশ রাজনীতিকেরা এই রুলিংকে বড় বিজয় হিসেবে দেখছেন। তাঁরা বলছেন, এ রায়ে পরিষ্কার হলো ব্রেক্সিট থামানোর সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি এবং ক্ষতিকর চুক্তি বা চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ—এই দুইয়ের বাইরেও ভাবার সুযোগ আছে।
লেবার পার্টি বলছে, এ রুলিং দেশের জন্য ভালো সংবাদ। স্কটল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নিকোলা স্টারজন বলেন, এখন এমপিদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা। তাঁরা বিচ্ছেদের সময় আরও বাড়িয়ে পুনরায় গণভোটের সুযোগ নেবেন কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। আর লিবারেল ডেমোক্রেট এ রায়কে ‘সম্ভাব্য সর্বোত্তম খবর’ বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। এরা সবাই থেরেসা মের করা বিচ্ছেদ চুক্তির বিরোধী।
তবে বিচ্ছেদের পথেই অবিচল আছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। সরকারের পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল গোভ বলেছেন, রায়ের সবটুকু ভালো। কিন্তু বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনো আগ্রহ সরকারের নেই। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ কার্যকর করার জন্যই সরকার কাজ করছে। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, ব্রেক্সিটের কোনো বিলম্ব হলে জনগণ অত্যন্ত বিরক্ত হবে। সরকার বিচ্ছেদের বিকল্প কিছু ভাবছে না।
দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাসের চেষ্টার পর বিচ্ছেদ বিষয়ে একটি চুক্তিতে সম্মত হয় যুক্তরাজ্য ও ইইউ। কিন্তু যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি সরকারি দলের অনেক এমপি এই চুক্তিকে দেশের স্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে তুমুল বিরোধিতা করছেন। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলছেন, চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা হলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্রেক্সিটই না হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।