যুক্তরাজ্যে আজ শনিবার ছিল অন্যান্য দিনের মতোই। আগের রাতে দেশটির ভবিষ্যৎ গতিপথে যে বিশাল বাঁকবদল ঘটে গেছে, তার লেশমাত্র প্রভাব জনজীবনে নেই। তবে রাজনৈতিক বিতর্কে এই বাঁকবদলের প্রভাব স্পষ্ট। তিন বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যের রাজনীতি অস্থির করে রাখা ব্রেক্সিটের পক্ষে-বিপক্ষের বিতর্ক গুরুত্ব হারিয়েছে। ভাবনায় এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিহীন যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ। বিশেষ করে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপ কী হতে পারে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ।
শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টায় ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘ ৪৭ বছরের সম্পর্কের অবসান ঘটে। ব্রেক্সিটপন্থীরা ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্ট স্কয়ারে নেচে-গেয়ে রাতটি উদ্যাপন করেন। ২০১৬ সালের গণভোটে বিজয়ের পর এই বিচ্ছেদ উদ্যাপনে দীর্ঘ প্রায় চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁদের। কেননা, রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ব্রেক্সিট কার্যকরের বিষয়টি বারবার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।
আর ব্রেক্সিটবিরোধীদের কাছে রাতটি ছিল অত্যন্ত বেদনার। তাঁরা মিছিলে-স্লোগানে শেষবারের মতো নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্কটল্যান্ডের মানুষ মোমবাতি জ্বেলে ইইউর প্রতি নিজেদের সমর্থন এবং ভালোবাসার কথা জানান দেয়। স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টারজিওয়ন বলেন, স্বাধীন দেশ হিসেবে স্কটল্যান্ড একদিন ইইউতে যুক্ত হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরেই স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চান নিকোলা। তবে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এতে কোনোভাবেই সায় দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
ইইউ থেকে বিচ্ছেদের পক্ষে-বিপক্ষে দেশবাসীর এমন বিভক্তির কথা মাথায় রেখে ব্রেক্সিট উদ্যাপনে কিছুটা নমনীয় কৌশল নেয় বরিস জনসনের সরকার। প্রধানমন্ত্রী জনসন এক ভিডিও বার্তায় দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ব্রেক্সিট কোনো কিছুর অবসান নয়; বরং নতুন জাতীয় জাগরণের সূচনা। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে ইইউ এমন পথে ধাবিত হয়েছে, যা যুক্তরাজ্যের স্বার্থের বিপরীত। তবে ইইউর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
যুক্তরাজ্য ইইউ ত্যাগ করলেও আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যমান সম্পর্কের সবকিছু বজায় থাকছে। তবে ইইউর সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্রিটিশরা আর অংশ নিতে পারবে না। শুক্রবার রাতেই ব্রাসেলস থেকে যুক্তরাজ্যের পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়েছে। যুক্তরাজ্যেও আর ইইউর পতাকা উড়ছে না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির রাজনীতিবিষয়ক সম্পাদক লরা কুয়েন্সবার্গ বলেন, তালাক হয়ে গেলেও যুক্তরাজ্য ও ইইউ একই বাসায় থাকছে। বাসার খরচও বহন করছে। তবে এই বিচ্ছেদের আসল প্রভাব টের পেতে অপেক্ষা করতে হবে ডিসেম্বর পর্যন্ত।