ব্রেক্সিট চুক্তিতে পার্লামেন্টের সমর্থন আদায়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। কিন্তু এই প্রস্তাব ব্রেক্সিট বিলে সমর্থন বাড়ানোর বদলে বিরোধিতাকে উসকে দিয়েছে। মে-কে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিতে তাঁর নিজ দলেই জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদ কার্যকরে সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে তিন দফা প্রত্যাখ্যাত হয়। সর্বশেষ বিরোধী দল লেবারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। গত রোববার প্রধানমন্ত্রী মে চুক্তিতে বড় ধরনের প্রস্তাব যুক্ত করে তা আবারও পার্লামেন্টে তোলার ঘোষণা দেন।
গত মঙ্গলবার লন্ডনে দেওয়া এক ভাষণে মে তাঁর নতুন প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন। প্রস্তাবগুলো হলো—চুক্তিতে শ্রম-অধিকার ও পরিবেশ বিষয়ে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আগামী সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত ইইউর সঙ্গে শুল্ক জোটের সম্পর্ক (কাস্টমস ইউনিয়ন) বজায় রাখা এবং ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর পুনরায় গণভোট (পাস হওয়া চুক্তি অথবা ইইউতে থেকে যাওয়া বিষয়ে) আয়োজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পার্লামেন্টকে সুযোগ দেওয়া।
জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোটাভুটির ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘সমঝোতার ভিত্তিতে ব্রেক্সিট কার্যকরের এটাই শেষ সুযোগ অথবা আদৌ ব্রেক্সিট না হওয়ার ঝুঁকি বহন করুন।’
প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর থেকেই তাঁর নিজ দলের বিদ্রোহীরা তাঁর ওপর আরও চড়াও হয়েছেন। তাঁরা মে-র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে কনজারভেটিভ দলের এ-সংক্রান্ত নিয়ম পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। কেননা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে থেরেসা মে তাঁর দলের আইনপ্রণেতাদের আস্থা ভোটে উতরে যান। দলটির নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে আর অনাস্থা প্রস্তাব আনার সুযোগ নেই।
মে-র স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে আলোচিত কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী বরিস জনসন থেরেসা মে-র ঘোষণাকে দলীয় ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি এই বিলের পক্ষে ভোট দেবেন না বলে জানান।
মূলত বিরোধী দলগুলোর সমর্থন আদায়ে বিলে নতুন প্রস্তাব যুক্ত করেছেন মে। কিন্তু বিরোধী দলগুলোও ইতিমধ্যে প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর অবস্থান থেকে আদৌ কোনো ছাড় দেননি। অন্যদিকে পুনরায় গণভোটের জন্য প্রচার চালানো লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের নেতা ভিন্স ক্যাবল বলছেন, পুনরায় গণভোট আয়োজনে পার্লামেন্টের মতামত যাচাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ দেওয়ার কিছু নেই। একটি প্রস্তাব আনার মাধ্যমেই যেকোনো আইনপ্রণেতা এটি করতে পারেন।
বিবিসির রাজনীতিবিষয়ক সম্পাদক লরা কুয়েন্সবার্গ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবাইকে খুশি করতে গিয়ে কাউকেই খুশি করতে পারলেন না।