ব্রিটেনের এক-তৃতীয়াংশ স্কুলছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তাদের প্রতি তিনজনের একজন স্কুলের পোশাক পরা অবস্থায় প্রকাশ্যে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। আর পুরুষদের অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন দৃষ্টির সংস্পর্শে আসতে বাধ্য হয় ওই ছাত্রীদের দুই-তৃতীয়াংশ। শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা চ্যারিটি সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ইউকের নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
স্কুলগামী এক হাজার ছাত্রীর ওপর চালানো জরিপের পাশাপাশি শিক্ষাবিদদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এমন প্রতিবেদন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, রাস্তাঘাটে হয়রানিতে নিজেদের বেড়ে ওঠার একটি অপরিহার্য অংশ বলে মনে করছে অনেক মেয়ে।
প্রতিবেদনে হয়রানির ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের তা প্রতিহত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল এক হাজারের বেশি কিশোরী ও ১৪ থেকে ২১ বছর বয়সী নারীদের ওপর জরিপ চালিয়েছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে ছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, জরিপে অংশ নেওয়া ছাত্রীদের ৬৬ শতাংশই প্রকাশ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন হেনস্তা অথবা পুরুষের যৌন হয়রানিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়েছে। ৩৫ শতাংশ মেয়ে স্পর্শ করা, ধরা বা এলোমেলো স্পর্শের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে। স্পর্শ, তাকানো, কটূক্তি বা জোরে শিস দেওয়ার মতো যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে এক-তৃতীয়াংশের বেশি ছাত্রী। তাদের এক-চতুর্থাংশ জানিয়েছে, অনুমতি না নিয়ে অপরিচিত লোকজন তাদের ছবি তুলেছে, নয়তো ভিডিও করেছে। জরিপে অংশ নেওয়া আট বছর বয়সী অনেক স্কুলছাত্রী জানিয়েছে, তারাও যৌন হয়রানি থেকে রেহাই পায়নি।
প্রতিবেদনে বার্মিংহামের ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীসহ বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়েছে। ওই তরুণী বলেন, একদিন একা হাঁটার সময় একটি কারের মধ্যে বসে কেউ একজন তার পিছু নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ফোন তখন বন্ধ ছিল কিন্তু আমি এমন ভাব করে ফোনে কথা বলি যাতে মনে হয় কিছুক্ষণের মধ্যে আমার বাবা এসে আমাকে নিয়ে যাবেন।’
১৮ বছর বয়সী অপর এক ছাত্রী মনে করেন, প্রকাশ্যে হয়রানির বিষয়টি তরুণদের কাছে পুরুষ সংস্কৃতির অংশের মতো। বাবাও তাকে বলেছেন, ‘তুমি জানো যে অনেক পুরুষ এমনই।’
প্ল্যান প্রকাশ্যে হয়রানিকে যৌন হয়রানি (সেক্সুয়াল হেরেজমেন্ট) হিসেবে ঘোষণা দিতে যুক্তরাজ্যর সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। যৌন হয়রানি ঠিক নয়, এমন বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জনসচেতনতামূলক প্রচার চালানোর পরামর্শও সংস্থাটির। সেই সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীরা কীভাবে নিরাপদে এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে পারেন, তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, কিশোর ও পুরুষদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও হয়রানি প্রতিহত করতে সহায়তা করা তরুণ জনগোষ্ঠীকে সম্পর্ক ও যৌন বিষয়ে সচেতনতামূলক শিক্ষা দেওয়ার সুপারিশ করেছে ওই গবেষণা সংস্থা। পাশাপাশি প্রকাশ্যে উন্মুক্ত স্থানে কাজ করা বাসচালক, দোকান কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে হয়রানি প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের (ইউকে) প্রধান নির্বাহী টানিয়া ব্যারন বলেন, দুঃখজনক ও গভীর উদ্বেগের বিষয় যে স্কুলপড়ুয়া মেয়েরাও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। ১২ বছর বয়সী একটি মেয়েকে প্রকাশ্যে শিস দেওয়া হবে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্পর্শ করা হবে, বাজে দৃষ্টিতে তাকানো হবে বা পিছু নেওয়া হবে, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরও বলেন, এই লজ্জাজনক আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে এবং তা বন্ধ করতে হবে। তথ্যসূত্র: বিবিসি