ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নৌকায় অভিবাসনপ্রত্যাশীরা
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নৌকায় অভিবাসনপ্রত্যাশীরা

বেঁচে থাকার তাগিদে মরিয়া মানুষ নির্যাতনের ঝুঁকিতে

কর্মহীন অভিবাসী থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিশুদের পর্যন্ত নিশানা বানাচ্ছে মানব পাচারকারীরা। আর এই কাজে তারা ব্যবহার করছে করোনাভাইরাস মহামারিকে। এ মন্তব্য করে জাতিসংঘের দুজন বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্বে অপরাধ আরও বেশি গোপনে সংঘটিত হচ্ছে।

এই বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক মন্দার জেরে অগণিত মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বেঁচে থাকার তাগিদে তাঁরা এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন এবং রয়েছেন অপব্যবহার ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের মনোযোগ থেকে দূরে থাকছেন। দাতা ও সাহায্য সংস্থাগুলোর সম্পদও ভিন্ন খাতে চলে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী আনুমানিক আড়াই কোটি মানুষ শ্রম ও যৌন অপরাধ সংশ্লিষ্ট পাচারের শিকার। বর্তমান করোনাকালে তাঁদের সহায়তাদান সেবা থেমে যাওয়ায় ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আরও মানুষ পাচারকারীদের নিশানায় পড়তে পারে এমন উদ্বেগ বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের নতুন নিয়োগ পাওয়া মানবপাচারবিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার সিওভান মুল্লালি বলেন, ‘(ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তায়) যে বিষয়টি জটিলতা তৈরি করছে তা হলো, এখন মানবপাচার চলছে আরও বেশি গোপনে এবং এটি কম দৃশ্যমান হচ্ছে।’ তিনি বলেন, বর্তমানে ‘পাচারের ঝুঁকিতে রয়েছে আগের চেয়ে বেশি মানুষ...বিশেষত অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির দেশের লোকেরা...পাচারকারীদের জন্য মরিয়া হয়ে পড়া লোকজনকে ইচ্ছেমতো কাজে লাগানো, অপব্যবহার করা ও নিজেদের শিকারে পরিণত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’

১৮ অক্টোবর বিশ্ব দাসত্ব বিরোধী দিবসকে সামনে রেখে সিওভান মুল্লালি এ মন্তব্য করেন। শ্রমবিষয়ক আইনজীবীরা বলছেন, বিশ্বে কর্মশক্তির ৬০ শতাংশের বেশি অর্থাৎ প্রায় ২৫০ কোটি মানুষ অনানুষ্ঠানিক কর্মজীবী। বিশেষত তাঁরাই নানান নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

জাতিসংঘের ওই বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার বলেন, বিশ্বের প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি অভিবাসী শ্রমিক করোনার এ সময়ে বিভিন্ন দেশে আটকে পড়ে আছেন। সীমান্ত বন্ধ থাকায় ও অভিবাসন নীতির কড়াকড়িতে তাঁরা নিজ দেশে ফিরতে বা অন্যের কাছে সহায়তা চাইতে পারছেন না। তাঁরা পাচারকারীদের নিশানায় পড়ার ঝুঁকিতে আছেন।

এদিকে মাদক ও অপরাধবিষয়ক জাতিসংঘ কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) ট্রাফিকিং শাখার প্রধান ইলিয়াস চ্যাটজিস বলেন, তাঁর অফিস অপরাধের ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব বিষয়ে এখনও তথ্য সংগ্রহ করছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁরা যে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, করোনাকালে অপরাধ ভয়াবহ রকম বাড়ছে।