গত বছর বিশ্বজুড়ে খাদ্যদ্রব্যের দাম ২৮ শতাংশ বেড়েছে। বিগত এক দশকের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি। ওই বছরে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। মূল্যবৃদ্ধির দৌড়ে এগিয়ে আছে দুগ্ধজাত পণ্যও। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থার (এফএও) পরিসংখ্যানে আজ বৃহস্পতিবার এসব তথ্য উঠে এসেছে। চলতি বছরও বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে এফএও একটি সূচক প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্য বৃদ্ধির গড় ছিল ১২৫ দশমিক ৭ পয়েন্ট, যা ২০১১ সালের পরে সর্বোচ্চ। ২০১১ সালে এ গড় ছিল ১৩১ দশমিক ৯ পয়েন্ট।
মাসভিত্তিক সূচকে গত ডিসেম্বরে খাদ্যদ্রব্যের দাম কিছুটা কমলেও এর আগের চার মাসে ধারাবাহিকভাবে দাম বেড়েছে। এ সময়ে শস্য উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গত কয়েক বছরের মধ্যে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দেয়।
এদিকে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতিও। করোনা মহামারির ধাক্কা থেকে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করলেও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। এফএও বলছে, এমন পরিস্থিতিতে আমদানিনির্ভর দেশগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে। সম্প্রতি হালনাগাদ করা তথ্যে এফএও বলেছে, চলতি বছরে খাদ্যদ্রব্যের দাম কিছুটা হলেও হ্রাস পেতে পারে।
এফএওন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আবদোল রেজা আব্বাসিয়ান এক বিবৃতিতে বলেছেন, চলমান করোনা মহামারি ও খাদ্যপণ্য উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়ায় খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অনিশ্চয়তার কারণে ২০২২ সালে খাদ্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক হবে, এমন আশা খুবই কম।
এদিকে সার ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদনে কৃষকদের খরচ বাড়ছে। এ কারণে আগামী বছর কৃষকদের কাঙ্ক্ষিত ফলন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। সূচকে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর মাসে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হলেও করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের কারণে ভবিষ্যতে পণ্য উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। অমিক্রনের প্রভাবে যুক্তরাজ্যে গম উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে।
২০২১ সালে সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়লেও সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। গত বছর ভোজ্যতেলের রেকর্ড পরিমাণ দাম বেড়েছে বলে সূচকে উঠে এসেছে। ২০২২ সালেও শস্যের বাজার নতুন কোনো সুখবর দিতে পারছে না।
দক্ষিণ আমেরিকায় খরা ও মালয়েশিয়ায় বন্যার কারণে তেলবীজের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘের এ সংস্থা। এদিকে পশ্চিম ইউরোপ ও ওশেনিয়ায় দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় গত ডিসেম্বরে ডেইরি পণ্যের দামও বেড়েছে।