কবিগুরুকে শান্তিনিকেতনে ‘বহিরাগত’ বলে সমালোচনার মুখে বিশ্বভারতীর উপাচার্য

শান্তিনিকেতন সাইকেলে করে পুলিশ সুপারের তদন্ত।
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী শান্তিনিকেতনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘বহিরাগত’ বলে মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

শান্তিনিকেতনের ঐতিহাসিক পৌষ মেলা ময়দানে প্রাচীরঘেরা নিয়ে ১৭ আগস্ট ব্যাপক গন্ডগোল হয়। অভিযোগ ওঠে, ওই দিন বিশ্বভারতী অঙ্গনে ‘বহিরাগত’রা এসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভাঙা হয় বিশ্বভারতীর গেট, অফিস।

প্রাচীর নির্মাণবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউরি। এ ঘটনার পর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলতে গিয়ে উপাচার্য ‘বহিরাগত’ মন্তব্য করেন।

উপাচার্য বলেন, ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেও বহিরাগত ছিলেন। তিনি যদি এই অঞ্চল পছন্দ না করতেন, তবে বিশ্বভারতী এত বিকশিত হতো না। এ ছাড়া গুরুদেব এবং তাঁর সহকর্মীরা, যাঁরা বিশ্বভারতীকে জ্ঞান, সৃষ্টিও বিস্তারের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করেছিলেন, তাঁরা সবাই বোলপুরের বাইরে থেকে এসেছেন।’

এই মন্তব্যের পর প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন উপাচার্য। বোলপুরের বিজেপি নেতা ও সাবেক সাংসদ অনুপম হাজরা উপাচার্যের এই মন্তব্যের পর বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজ কোনো ব্যক্তির নাম নয়; একটি আবেগের নাম। তাই বিশ্বভারতীর প্রাচীর ভেঙে দেওয়ার ঘটনাকে মেনে নিতে পারিনি; তেমনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বহিরাগত বলাও মেনে নিতে পারিনি। এতে আমি দারুণভাবে ব্যথিত হয়েছি। প্রাচীরবিরোধী আন্দোলনের জড়িত ব্যক্তিরা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমার আন্দোলন জারি থাকবে শান্তিনিকেতনে। প্রয়োজনে এই আন্দোলনকে বেগবান করতে আমি অনশনেও যেতে রাজি।’

এদিকে গতকাল সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করণ নায়ার রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলা করেছেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার। তিনি আবেদনে বলেছেন, কীভাবে বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে ভাঙচুর চালাল, বিশ্বভারতীর ক্ষতিসাধন করল, পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিল না, সেই ঘটনা তদন্তের জন্য সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক।

বিশ্বভারতীর ঘটনার তদন্তে গতকাল বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিং নিজে বাইসাইকেলে চড়ে শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন আশ্রমিকের বাসভবনে গিয়ে সংঘর্ষের কারণ জানার চেষ্টা করেন।