মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সমর্থকদের বিক্ষোভস্থল থেকে উচ্ছেদের সময় শত শত মানুষ নিহত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কোনো কোনো দেশ ও জোট এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ইরান ও কাতার কায়রোতে সেনা সমর্থিত সরকারের রক্তক্ষয়ী অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তুরস্ক এর কঠোর সমালোচনা করেছে। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন: ২৮টি ইউরোপীয় দেশের এ জোটের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টন এই অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মিসরের নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মিসরের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টাই কেবল দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এই অভিযানকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে বলেন, এর ফলে মিসরের অন্তর্বর্তী সরকার ও মুরসির সমর্থকদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করার প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তিনি বলেন, সহিংস পথ অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক দুর্যোগ ও দুর্দশাই ডেকে আনে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই অভিযানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র মিসরের সঙ্গে একটি যৌথ সামরিক মহড়া বাতিলের কথা বিবেচনা করছে।
যুক্তরাজ্য: সহিংসতা কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি বলেন, মিসরে সত্যিকার গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য সত্যিকারভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই সমঝোতায় আসতে হবে।
জাতিসংঘ: জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মিসরের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে চায়। বিরোধ মীমাংসার দিকে মনোযোগ দিতে তিনি মিসরের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানান।
ফ্রান্স: প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেছেন, মিসরে গৃহযুদ্ধ এড়াতে সম্ভব সব কিছুই করতে হবে। রক্তক্ষয়ী অভিযানের ব্যাপারে নিজেদের উদ্বেগ জানাতে প্যারিসে নিযুক্ত মিসরের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছেন ওলাঁদ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী লঁরা ফ্যাবিয়াস এই অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন।
জার্মানি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ভেস্টারভেল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই অভিযানকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন। পরোক্ষভাবে মিসরের বর্তমান কর্তৃপক্ষের সমালোচনাও করেন তিনি। সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে জার্মানিতে নিযুক্ত মিসরের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে জার্মানির পররাষ্ট্র দপ্তর।
তুরস্ক: মিসরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, এটা ভয়াবহ গণহত্যা, শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভরত জনগণের বিরুদ্ধে এই গণহত্যা চালানো হয়েছে।
ইরান: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই অভিযানের নিন্দা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এই অভিযান মিসরে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও প্রবল করেছে।
তিউনিসিয়া: প্রেসিডেন্ট রাশিদ ঘানুচ এই অভিযানকে ‘ঘৃণ্য অপরাধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। মুরসিপন্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে তিনি তাদের ‘স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার ও সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করার লড়াই’ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন কায়রোতে সরকারের দমন অভিযানকে সমর্থন দিয়ে বলেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। টেলিগ্রাফ, এএফপি ও রয়টার্স।